খবর৭১ঃ
বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর পর্দা নামল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এই প্রাণের মেলা। আজ শনিবার সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের বই উৎসবের।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, এবারের মেলায় নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৯১৯টি। এর সিংহভাগই ছিল কবিতার বই। এরপরে আছে উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ।
বাংলা একাডেমির বিচারে এবার মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি।
এবারের মেলার আলোচিত ও সর্বাধিক বিক্রীত বই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটি মেলায় দ্বিতীয় সংস্করণও বিক্রি হয়ে গেছে।
একাডেমির তথ্যমতে, গতবারের চেয়ে এবার দুই কোটি টাকার বেশি বই বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হয়েছে মোট ৮২ কোটি টাকার বই। গত বছর মেলায় ৩০ দিনে ৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। এর আগে ২০১৮ সালের মেলায় বই বিক্রি হয়েছিল ৭০ কোটি টাকার।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যার বিচারের এবার কবিতার বই এসেছে সবচেয়ে বেশি-এক হাজার ৫৮৫টি। গল্পগ্রন্থ ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণাগ্রন্থ ১১২, ছড়াগ্রন্থ ১১১, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনীগ্রন্থ ১৪৯, রচনাবলি ৮টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১৫২টি, নাটক ৩৪টি, বিজ্ঞানবিষয়ক ৮৩, ভ্রমণকাহিনী ৮২টি, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি বিষয়ক ১৩টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক ৩৬টি, রম্য ৪০টি, ধর্মীয় ২০টি, অনুবাদ ৫৭টি, অভিধান ১৪টি, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ৬৭টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪টি এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার আয়োজন করা হয়। তবে এবার মেলার পরিসর ছিল অনেক বড়। পুরো মেলার অঙ্গনকে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছিল। স্টল ও প্যাভেলিয়নের সাজসজ্জায়ও ছিল বৈচিত্র্য। মানুষ ঘুরেফিরে স্বাচ্ছন্দে বই কিনেছেন। ক্লান্তি জুড়াতে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ছিল বেঞ্চ। ছিল পর্যাপ্ত শৌচাগার এবং পানিপানের ব্যবস্থা।
এবারই প্রথম শিশু চত্বর এবং লিটল ম্যাগাজিন চত্বর বাংলা একাডেমি থেকে সরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাজানো হয়েছিল।
মেলায় লোকসমাগম ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। বিক্রিও হয়েছে ভালো। এতে করে প্রকাশকরাও খুশি।
কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি সোহেল বলেন, গতবারের তুলনায় এবার বই বেচাকেনা বেশি হয়েছে। ক্রেতাসমাগমও অনেক বেশি ছিল। তবে মেলায় আগতদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা করলে ভালো হতো।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের আইটি কর্মকর্তা আবদুল আলিম বলেন,এবারের মেলার শিশুতোষ বইয়ের বিক্রি ভালো ছিল। মেলার পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কারও কারও স্টলের অবস্থান সুবিধাজনক স্থানে ছিল না বলে তাদের বিক্রি কম হয়েছে- এমন দাবি করেছেন। সাহিত্য প্রকাশের ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় বেচাবিক্রি ভালো হয়নি। কেননা, আমাদের স্টল কোনায় জায়গা পাওয়াতে এদিকটায় লোকসমাগম কম হয়েছে। পরিসর ছোট হলে আরো ভালো হতো।
সময় প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মকর্তা রাসেল বলেন, বেচাকেনা তেমন একটা জমেনি। পরিসর বাড়লেও প্রচারণা কম কম হয়েছে। বই বাড়লেও বইয়ের মান বাড়েনি।
আগামী প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, মেলা দুই অংশে আয়োজন করার ফলে, দর্শনার্ধীরাও বিভক্ত হয়েছে। অনেকেই বাংলা একাডেমি ঘুরে চলে গেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে মেলা হচ্ছে সেটা অনেকেরই জানা নেই।
অনুপম প্রকাশনীর প্যাভেলিয়ন ম্যানেজার শাহীন বলেন, মেলা বড় পরিসরে আয়োজনের ফলে স্টলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যার কারণে স্টলভেদে পাঠকও কমেছে। অন্যদিকে মানুষ ইন্টারনেটে সময় কাটানোর ফলে বই পড়ার আগ্রহ কমেছে।
শুক্র ও শনিবার ছাড়া মেলা চলে প্রতিদিন তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলে। ছুটির দিনে মেলার দ্বার খোলে বেলা ১১টায়। বন্ধ হয় রাত নয়টায়। একুশে ফেব্রুয়ারি মেলার সময়সূচি ছিল সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে আটটা।