শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : ভারতীয় বিএসএফ কর্র্র্তৃক দু’দেশের (বেনাপোল-পেট্রাপোল) বন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস কর্মচারি যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের ডাকা অনির্দিষ্ঠকালের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য “বন্ধ” সচল করতে বৈঠক করেছেন দু’দেশের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী-কর্মচারি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বেনাপোল আর্ন্তজাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনে অবস্থিত স্থলবন্দরের অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক(ট্রাফিক) মামুন তরফদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা, বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান, বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মফিজুর রহমান সজন, সাবেক সভাপতি শামছুর রহমান, সহসভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, কামাল উদ্দিন শিমুল, যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেন, কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, বন্দর বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন, সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান প্রমুখ।
ভারতের পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রতন কুমার বিশ^াস, সাধারন সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী, সাবেক সভাপতি বিশ^জিৎ ঘোষ, বনগাঁ মোটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক দিলীপ দাস, মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক প্রভাস কুমারসহ ১১ ব্যবসায়ী নেতা।
এর আগে কাস্টমস সরকার পারমিটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্য সম্পাদনের জন্য বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে যাতায়াত করত দু’দেশের সিএন্ডএফ কর্মচারিরা। হঠাৎ মঙ্গলবার সকালে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের কাগজপত্র নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে গেলে বিএসএফ’র বাধার মুখে পড়ে বেনাপোলের সিএন্ডএফ কর্মচারিরা। একইভাবে ভারতীয় সিএন্ডএফ কর্মচারিরাও বিএসএফ’র বাধার মুখে পড়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। যার ফলে উভয় বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অনির্দিষ্ঠকালের জন্য বন্ধ করে দেয় দু’দেশের ব্যবসায়ীক সংগঠণ। যেকারণে কোন পণ্য বোঝাই ট্রাক আসা-যাওয়া করতে পারেনি। উভয় দেশে আটকা পড়ে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার পণ্য বোঝাই ভারত-বাংলাদেশ ট্রাক। এর মধ্যে পঁচনশীল পণ্যও রয়েছে অনেক। যা নিরশনের লক্ষ্যে দু’দেশের কাস্টমস কর্মকর্তারা দফায় দফায় যোগাযোগ করলেও কোন সুরাহা না হওয়ায় দু’দেশের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সংগঠণ, কর্মচারি সংগঠণ ও কাস্টম-বন্দরের কর্মকর্তারা বেনাপোল বন্দরের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিচয় পত্রের মাধ্যমে দুই দেশের সিএন্ডএফ কর্মচারিরা আমদানি-রফতানি কাজে সহজিকরণ ও দ্রুত আনয়নের সুবিধার্থে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে যাতায়াত করে থাকে। হঠাৎ মঙ্গলবার সকালে কাগজপত্র নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে চাইলে বিএসএফ সদস্যরা বাধা দেয়। তারা বলেন, এভাবে প্রবেশ করা যাবে না। পাসপোর্ট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে। বিএসএফ’র হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। যেকারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। তিনি আরো বলেন, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা যদি কাগজপত্র আদান প্রদান করতে না পারে তবে ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। যেখানে কারপাস আছে। দু’দেশের সরকারের বৈধতা দেওয়া আছে। সেখানে বিএসএফ’র বাধা দেওয়া আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভালো দিক নয়।
উক্ত বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃবৃন্দ জানান, ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন মঙ্গলবার সকালে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের একটি আদেশ এসেছে এমন যাতায়াত বন্ধে। দু’দেশ যাতায়াত করতে হলে পাসপোর্ট/ ভিসা লাগবে। যা উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাউকে যাতায়াত করতে দিবে না। এ অবস্থায় এই পথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। আরো বলেন, আমরা বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমদানি-রপ্তানির কাজ দেখভালের দায়িত্ব কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারাও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
উক্ত বৈঠকে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা সীমান্তরক্ষী বিএসএফ’র এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং দ্রুত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, সিএন্ডএফ কর্মচারিদের দীর্ঘদিনের যাতায়াতের বিষয়টি কোনো আলোচনা বা সময় না দিয়ে ভারতীয় বিএসএফ’র এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হয়নি। এ কারণে এই পথে দু‘দিন ধরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল-পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টের সাথে বৈঠক হয়েছে। তারা বিএসএফ’র সাথে কথা বলে দ্রুত আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচল করার চেস্টা করছেন। আমরাও পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য সচল করার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন ভারত থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪শ ট্রাক আমদানি পণ্য বেনাপোল বন্দরে আসে এবং বেনাপোল দিয়ে দেড়’শ থেকে ২’শ ট্রাক রপ্তানি পণ্য ভারতে যায়। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক ও খাদ্যদ্রব্য রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য উল্লেখযোগ্য। এ বন্দরের আমদানি পণ্য থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। গত দুই দিন আমদানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সরকারের প্রায় ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে বিঘিœত হয়েছে।
এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্টে বিজিবি, বিএসএফ, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে আরেকটি বৈঠক চলমান বলে জানালেন বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন।