খবর৭১ঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা লড়তে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি মহিলা ওয়ার্ডে ৫৫টি কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দুই শতাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের অধিকাংশই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি বহিষ্কার করা হতে পারে দলের পদ-পদবি থেকেও।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চসিকে নৌকার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন ১৫ জন কাউন্সিলর। ইতিমধ্যেই এই ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন।
৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আ’লীগের মনোনয়ন পাওয়া বহু অপকর্মের হোতা ও রাজাকারপুত্র হিসেবে চিহ্নিত কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফুকে বাদ দিতে এলাকায় প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।
চসিকের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর স্থলে নৌকার টিকিট পেয়েছেন গাজী শফিউল আজিম। এই ওয়ার্ড থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার জাহান ও সিরাজুল ইসলামসহ বহু নেতা।
২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদ আহমদ চৌধুরী, বাস্তুহারা লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনও এই ওয়ার্ড থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান দলের ইলিয়াছ আহমেদ লেদু ও আবুল কালামসহ আরও কয়েকজন।
৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু দলীয় মনোনয়ন পেলেও বঞ্চিতদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাইফুর মনোনয়নে সাধারণ ভোটার ও দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
নৌকার টিকিটে কাউন্সিলর হওয়ার পর নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন সাইফু। চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য, বালু সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মন্ত্রী-মেয়রের নামফলক ভেঙে ফেলা, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডার এবং মাদকসেবীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তাই এই ওয়ার্ডের সাধারণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই চাইছেন না সাইফু আবারও কাউন্সিলর হোক, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করুক। দলকে ভুল বুঝিয়ে, আওয়ামী লীগ নেতা সেজে ‘রাজাকারপুত্র’ হিসেবে চিহ্নিত সাইফু পুনরায় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। নৌকার প্রার্থী বদল না হলে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী নুরুল আমিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই ওয়ার্ডে লড়তে চান আলম দিদার, নাজমুল হক ও জানে আলমসহ বেশ কয়েকজন।
৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আলম দলীয় মনোনয়ন পেলেও ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান (তারেক) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল আবছার। মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর জহুরুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান। ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. ইসমাইল।
বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আকতারও লড়তে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে নুরুল আমিন মনোনয়ন পেলেও বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহমেদ। তিনিও নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমদ লড়তে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে, এই ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল হাসনাত। ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
তবে সাবেক কাউন্সিলর এমএ নাসের এবং ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদুল ইসলাম রিন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন।
তবে বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উলাহও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে চান। ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন। অন্যদিকে বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাশেমও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ জাফরুল হায়দার। বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকতে চান।
২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ড থেকে এবার বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল কাদের। তার স্থলে মনোনয়ন পান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাহাদুর। তবে আবদুল কাদেরও থাকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আতাউল্লাহ চৌধুরী।
বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন থাকছেন। ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তারেক সোলায়মান সেলিম।
তার স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সালাম। তবে তারেক সোলায়মান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান। ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদও ভোটে থাকছেন। তার স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী যুগান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড চসিক নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া আছে।’