খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ “মুজিববর্ষের অঙ্গিকার, পুলিশ হবে জনতার”এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার বিরামপুর থানায় নারী, শিশু,বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা ও সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিরামপুর থানায় হেল্প ডেস্ক’র উদ্বোধন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক মেধাবি শিক্ষার্থী রাজ কুমার শীলের পাশে দাড়ালেন দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম ( বার)। গতকাল শনিবার বিরামপুরে এসে ওই দুটি কর্মসুচিতে অংশ নেন তিনি।
থানা পুলিশ জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক মেধাবি ছাত্র রাজকুমার শীল বর্তমানে ৫০ টাকা মজুরীতে একটি ভুষির কারখানায় কাজ করছেন শিরোনামে, এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসনসহ অনেকেই তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পারেন দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার)। মেধাবি রাজকুমারের অসহায়ত্বের ঘটনাটি তাঁর মনে নাড়া দেয়। তিনি মানবিক কারণে চুপ না থেকে এগিয়ে এলেন তাঁকে সহযোগিতা করতে। একারণে গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মো. হাফিজুর রহমান, বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান মনির ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে হাজির হন ঘাটপার এলাকার স্বর্গীয় লগিনা শীলের পুত্র রাজকুমার শীলের বাড়িতে। এসময় পুলিশ সুপার তাঁর মা পার্বতি রানী শীল, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করে রাজকুমার শীলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি মিষ্টি ও ফল খাওয়ান রাজকুমারসহ তা্র পরিবারের অন্যদের। এসময় তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ খবরসহ পারিবারিক অন্যান্য বিষয়গুলো সাংবাদিক ও পরিবারের লোকজনের কাছে শোনেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রাজকুমার শীলের কাহিনী শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন মেধাবি শিক্ষার্থী রাজকুমার শীলের হাতে। এসময় তার চিকিৎসা যাবতীয় ব্যয়ভার বহণ করাসহ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন পুলিশ সুপার। একইসাথে তাঁর পুরাতন জীর্ণ বাড়ি সংস্কার ও রাজকুমার যাতে সাবলম্বি হতে পারে সেজন্য তাঁর বাড়ির সামনে একটি দোকান করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সাথে এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান, বিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শাহিনুর আলম, সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মশিহুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যরা। প্রসঙ্গতঃ বিরামপুর পৌর শহরের ঘাটপাড় এলাকার স্বর্গীয় শ্রী লগীনা ও পার্বতী রানী শীলের ছেলে রাজ কুমার শীল বিগত ১৯৮০ সালে বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন । পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নেন।
পরবর্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় অসুস্থ্য হয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাঁর জীবনের কাহিনী হৃদয় বিদারক। এখন অসুস্থ অবস্থায় তিনি মাত্র ৫০ টাকা বেতনের একটি কারখানার শ্রমিক। আর এমন হৃদয় ছোঁয়া ঘটনা প্রকাশ হলে তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। এদিকে এরআগে দুপুরে “মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিরামপুর থানায় জনগনের মাঝে পুলিশী সেবা পৌছে দিতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম, পিপিএম ( বার) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওই হেল্প ডেস্কের উদ্বোধন করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মো. হাফিজুর রহমান, বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরআগে পুলিশ সুপার মো. আনেয়ার হোসেন থানা চত্বরে এলে বিরামপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান মনির।