খবর৭১ঃ মাথা থেকে রোজই কিছু-না-কিছু চুল ঝরে। আবার স্বাভাবিক নিয়মে তা পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা একটু বাড়তি হলেই দুশ্চিন্তা ও হতাশার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ক্লিনিকগুলোতে ত্বক বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, মানুষের নিয়মিত উদ্বেগগুলোর একটি হচ্ছে এই অতিরিক্ত চুল পড়া। সমস্যাটি উত্তরণে বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হওয়ার মাত্রা গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
কেন বাড়তি চুল ঝরছে?
কেন এভাবে চুল ঝরছে, তা জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। চুল কোষের নিজস্ব একটি জীবনচক্র আছে। এটির বৃদ্ধির পর্ব, স্থায়িত্ব ও পরবর্তী সময়ে ঝরে যাওয়া। কিন্তু কখনও কখনও সেই জীবনচক্র বিঘ্নিত হতে পারে।
মানসিক চাপ, নিম্নমানের জীবনযাত্রা, সুষম খাবারের অভাব, ঠিক সময়ে না-ঘুমানো কিংবা অপর্যাপ্ত ঘুমেও চুল পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও প্রচুর ভ্রমণ চুল কোষের জীবনচক্র সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বড় একটা সময় ধরে চুল ঝরলে তাতে দীর্ঘস্থায়ী চুল খোয়াতে হবে। আর চুল ঝরা তীব্রতর হলে স্বল্প সময়ে চুল হারাতে হতে পারে। এমনটা নিয়মিত ঘটলে মাথা খালি হয়ে টাক পড়ে যাবে।
ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি৩ ও লৌহ ঘাটতি কিংবা রক্তশূন্যতা, হরমোন ভারসাম্যহীনতা বা ইনসুলিন নিরোধক, পিসিওএস (পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রম, থাইরয়েড ঘাটতি কিংবা মানসিক চাপ বৃদ্ধি ও সেই সময়টা পার হওয়ার পরে, রোগাক্রান্ত হওয়া কিংবা গর্ভাবস্থার পরে) চুল ঝরে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ অবস্থা থেকে বাঁচতে পরীক্ষা করতে হবে।
এ সব ঘাটতি ও ভারসাম্যহীনতা দূর করার পরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মাথায় রাখতে হবে। বাদাম, খেজুর, ডুমুর, শস্যবীজ, রঙিন শাক-সবজি, সবুজ-হলুদ-কমলা-লাল রঙের একটি করে ফল খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাকতে হবে। এ ছাড়া একবাটি দই, ডিম, মাংস, পনির ও দুধের মতো ভারসাম্যপূর্ণ প্রোটিন রাখা যেতে পারে।
কাজের চাপ ও ব্যস্ততায় অনেক ক্ষেত্রে সুষম খাদ্যতালিকা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের কাছে যেতে হবে। তার পরামর্শে একটি খাদ্যপরিকল্পনা বানিয়ে সেই মোতাবেক চলতে হবে। কী খেতে হবে, কী পরিমাণ ও কখন– চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে– তা জেনে নিতে হবে।
এই খাদ্যপরিকল্পনা চুল গজানো ও বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারে ও নতুন করে গজিয়ে মাথার চুল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
একইভাবে ঘুমও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সময়টা– যখন শরীর সেরে ওঠে ও আরোগ্য লাভ করে।
রক্তসঞ্চালন বাড়াতে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। এতে প্রতিটি কোষ সমানভাবে অক্সিজেন পাবে।
বিশেষ করে পিসিওএস (পলিসিসটিক ওভারিস), হরমোন ভারসাম্যহীনতা ও থাইরয়েড সমস্যায় গ্লাইসেমিক সূচক কম রাখতে গেলে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। কোনো খাবার রক্তে শর্করা কতটা বাড়াতে পারে, এই সূচক তার নির্ধারক।
কী উচিত, কী উচিত না
চুল পড়া বন্ধে এরপর জানতে হবে, কী করা উচিত ও কী উচিত না। মাথা কখনোই গরম পানিতে ধোয়া কিংবা ঘষা-মাজা করা যাবে না। তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে, এতে চুল চকচকে ঔজ্জ্বল্য ফিরে পাবে। কিন্তু সেটা অতিরিক্ত করা যাবে না। বাড়তি শ্যাম্পুর ব্যবহারও চুল হারানোর কারণ হতে পারে।
চুল ধুইতে হবে ডিটারজেন্টমুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে। চুল ঝরা শুরু হলে সেলুনে গিয়ে মালিশ কিংবা স্পার মতো ভারী বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পরই কেরাটিন কিংবা সিস্টাইন জটিলতার চিকিৎসা করা যাবে।
আজকের দিনে অহরহ সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু উৎপাদন হচ্ছে। এটি মাথার ত্বকে কম প্রদাহ সৃষ্টি করে। আর অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতেও সহায়ক এই শ্যাম্পু।
কীভাবে আমরা নতুন চুল কোষ গজাব?
প্রথমে চুল পড়ার কারণ বের করতে হবে। জানতে হবে, এটা কি চিকিৎসা, জিনগত, হরমোন নাকি অসুস্থতা পরবর্তী কারণে ঘটছে। এরপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ততা গড়তে হবে। তৃতীয়ত, খাবার ও চুলের ভিটামিন অবশ্যই সুষম হতে হবে। চতুর্থ, নতুন চুল গজাতে মাইনক্সিডিল লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে। রোজ রাতে আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার তালু হালকা মালিশ করতে হবে।
পঞ্চম, চুলের সঠিক পণ্যটি ব্যবহার করতে হবে। যাচ্ছে-তাই জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে। ষষ্ঠ, চুল পড়া শুরু হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। তার পরামর্শমাফিক চলতে হবে। তবেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে চুল।