খবর৭১ঃ সম্মেলনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। অপেক্ষায় রয়েছেন যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা। তবে দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে এসব কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে বাদ পড়েছেন বিতর্কিত ও পদ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তরা।
সংগঠনে ক্লিন ইমেজের এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হয় এ সম্মেলনযজ্ঞ।
৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের সম্মেলন। ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ নভেম্বর যুবলীগ এবং ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন। এসব সংগঠনকে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সিটি নির্বাচনসহ নানা কারণে এখন পর্যন্ত কোনোটিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি সফরে ইতালি যাওয়ার আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মৌখিকভাবে সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দিয়ে যান। দলীয় প্রধানের নির্দেশে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। তিনি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নির্দেশ দেন।
সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, দায়িত্ব পাওয়ার পরই তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, ডিসেম্বর মাসের কর্মসূচি এবং জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি ভোটের ব্যস্ততার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির যোগ্য ও ত্যাগীদের জায়গা করে দিতে সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করেছেন তারা
একই সঙ্গে গত কমিটিতে যারা দলের পদে থেকে শীর্ষ দু-একজন নেতার মদদপুষ্ট হয়ে কমিটি বাণিজ্য করেছেন তাদের রাখা হয়নি কমিটিতে। এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ চন্দ্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কমিটির খসড়া করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছি। তার অনুমোদন মিললেই ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, যারা এর আগে পদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন, দীর্ঘদিন জেলা পর্যায়ে কৃষক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয় যুবলীগকে। কয়েক দিনের মধ্যেই কমিটি চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে এসেছি। আরও কয়েক দিন লাগবে। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করতেই সময় লাগছে। যারা এর আগে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন তাদের জায়গা দেওয়া হবে না নতুন কমিটিতে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিরাই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসবেন। ’
বিগত কয়েকটি কমিটির পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সবচেয়ে বেশি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এবারও ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দিয়েই কমিটির খসড়া তালিকা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন-পুরনোদের সমন্বয়ে আমরা কমিটির খসড়া চূড়ান্ত করেছি। সংগঠনের সভাপতি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ’
দীর্ঘদিন আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও মৎস্যজীবী লীগকে এবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়। গত ২০ ও ২১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সংগঠনটির সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি মেলে। সংগঠনটির কমিটিও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর লস্কর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো সময়ে ঘোষণা করা হবে। যাচাই-বাছাই করতেই এ সময় নেওয়া হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জায়গা দেওয়া হবে সংগঠনের কমিটিতে। ’ ১১ ও ১২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ বলেন, কোনো মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না।