খবর৭১ঃ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর (স্কোর) ও মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী বাছাই করবে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন পদ্ধতি নিয়ে এখন আর সরাসরি দ্বিমত করছে না। তবে নতুন পদ্ধতিতে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিষয়ে চূড়ান্ত কথা এখনো দেয়নি তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, চার বিশ্ববিদ্যালয়কে এ মাসেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। কারণ, নতুন পদ্ধতিতে কীভাবে, কখন ও কোন প্রক্রিয়ায় স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি কার্যালয়ে ওই চার বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে সভা হয়। সভা শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা হবে। সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কারও দ্বিমত ছিল না।
সভায় উপস্থিত থাকা একজন উপাচার্য বলেন, সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য থাকা দরকার। এই বৈচিত্র্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সৌন্দর্য। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদ ও সাধারণ ভর্তি কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেই পথেই তাঁরা অগ্রসর হবেন।
প্রায় একই কথা বলেছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, গতকালের সভায় যেভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তাতে উদ্যোগটি ভালো হবে বলে তাঁদের মনে হচ্ছে।
সরকারের এই উদ্যোগকে শুভ উদ্যোগ বলে মনে করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিক্ষা পরিষদের সভায় নেওয়া হবে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার।
ইউজিসির একাধিক সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাবে ইউজিসি। শেষ পর্যন্ত যদি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অপারগ হয় তাহলে তাদের বাদ রেখে বাকিদের নিয়েই এ বছর নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথমে এই পরীক্ষাকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বলা হলেও এখন এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা’ ইংরেজিতে এর সংক্ষেপ করে বলা হচ্ছে সিএটি বা ক্যাট (সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন টেস্ট)।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করে না। বাকি ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে। পরীক্ষা দেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত বা গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে গত বছর (চলতি শিক্ষাবর্ষ) সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ বছর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা হচ্ছে।
ইউজিসির একাধিক সদস্য ও একাধিক উপাচার্যের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়ের জন্য মোট তিনটি পরীক্ষা হবে। এর মানে হলো বিভাগ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী একটিই ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি মাথায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর (স্কোর) ও মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। শূন্য থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত থাকবে এই স্কোর। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী ওই তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির কাজটি করবে। যেমন ওই পরীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট (যদি চূড়ান্তভাবে রাজি হয়) কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে তারা ১০০-তে ৮০ নম্বরের বেশি পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করবে, তখন সেই চাহিদার ভিত্তিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে তারা। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর মধ্যে থেকেও পয়েন্টের ব্যবস্থা রাখতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পুরো কাজটি হবে অনলাইনে। ফলে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য আলাদা করে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হলেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
প্রাথমিকভাবে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ভিত্তিতে এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হলেও উপাচার্যদের কেউ কেউ ৫০ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং ৫০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন নেওয়া হবে। আর ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে নভেম্বরের মধ্যে। এ বিষয়ে ইউজিসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তির কাজটির জন্য শিগগির বিভিন্ন কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। কমিটিগুলোই এই বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবে।