খবর৭১ঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ তারা জানে, খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা যাবে না। দুর্নীতি করা যাবে না।
তিনি মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর নূর আহমদ সড়কস্থ দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস ও বাকস্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে দেশে আবারও একদলীয় বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করছে। তাই গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এরপরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। তার মামলাটি জামিনযোগ্য। মামলায় আপিল করা হয়েছে। তাই বলা যায়, এটা বিচারাধীন মামলা। বিচারাধীন মামলায় জামিন দেয়া যায়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলায় আপিল করে জামিনে রয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারণ তাকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
বিএনপি নেতাকর্মীসহ সারা দেশের মানুষ দুঃসময় পার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ এর আগে এতবড় দুঃসময় আর দেখেনি। জনগণের কাছে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এগুলোর উদ্দেশ্য একটাই- দেশে একদলীয় শাসন চালু করা। পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে এই সরকারের খুব একটা পার্থক্য নেই। পাকহানাদার বাহিনী গণতন্ত্র হত্যা, লুটপাট, শ্লীলতাহানিসহ নানারকম নির্যাতন চালিয়েছে এ দেশের মানুষের ওপর। এখন সেই একই অবস্থা চলছে।
দেশে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি চলছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এখন একটি পর্দা ৭০ হাজার আর বালিশ ১০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি বলতে কিছুই নেই। গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পথে। রাজস্ব আয় কমেছে। এ জন্য জনগণের ওপর নানারকম করের অত্যাচার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশে লুটপাটের রাজনীতি কায়েম হয়েছে।
বিএনপি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অংশ নেব এমন সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত এখনও বলবৎ আছে। আমরা নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চট্টগ্রামের উপনির্বাচন ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫-৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। কিন্তু দেখানো হয়েছে ৩০ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনারের নিজের আঙ্গুলের ছাপই মিলেনি। তিনি প্রিজাইডিং অফিসারের আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার চাইলে সব ভোটই দিয়ে দিতে পারেন।
নেতাকর্মীদের হাতশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জন্মের পর থেকে বিএনপিকে বহুবার ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। কেউ পারেনি। আওয়ামী লীগও পারবে না। কারণ বিএনপি শুধু কর্মীনির্ভর দল নয়। গণমানুষের দল। সমস্ত শক্তি একত্রিত করে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দানবকে পরাজিত করতে হবে।