খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ সৈয়দপুরের রেলওয়ের পতিত জমিতে বসবাসকারিদের মাঝে উচ্ছেদ আতংক শুরু হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কাল বুধবার বসবাসকারিদের উচ্ছেদ করা হবে এমন নোটিশে ওই আতংক শুরু হয়। ফলে উচ্ছেদ বন্ধে মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বসবাস করার জায়গা দিয়ে সারাবিশ্বে মানবতার মা উপাধি পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে উচ্ছেদ আতংকে শহরের হাওয়ালদার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে শহরের পাঁচমাথা মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। এসময় তারা উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান লেখা সম্বলিত কাগজের প্লাকার্ড বহন করে। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপি চলা এ সময় তাদের চোখে মুখে ছিল উচ্ছেদ আতঙ্ক পরিলক্ষিত হয়েছে। রেলওয়ের জমিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনেকে নারী সদস্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কর্মসুচিতে বক্তব্য বলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল দিদার দিপু, সমাজসেবক পিকে সাইদুল ইসলাম এবং সাহিদ হোসেন।
সমাবেশে বক্তারা মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সৈয়দপুর হচ্ছে রেলের শহর। এখানে স্বাধিনতার আগে থেকেই হাজার হাজার পরিবার রেলের পতিত জমিতে বাসস্থান তৈরী করে বসবাস করে আসছে। তারা বলেন রেলের জমিতে বসবাসকারিরা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের নিজস্ব কোন জমি জমা নেই। তাই বাধ্য হয়ে রেলের পতিত জমিতে বসবাস করছেন তারা। এঅবস্থায় তাদের মাথা গোঁজার ঠাইটুকু যদি উচ্ছেদ করা হয় তাহলে তাদের রাস্তায় অবস্থান ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। বক্তারা আরও বলেন রেলের কথামত সৈয়দপুরে রেল জমিতে বসবাসকারিরা তাদের দেয়া নির্ধারিত ফরমে গত অক্টোবর মাসে পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী ভূ- সম্পত্তি দপ্তরে লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করে।
কিন্তু সে আবেদনের কোন ফলাফল না জানিয়ে নতুন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্তে সৈয়দপুরবাসী আজ আতংকিত। সমাবেশে রেল জমিতে বসবাসকারিদের উচ্ছেদ না করে লীজ দেয়ার আহবান জানিয়ে বক্তারা বলেন,রেলওয়ে অপ্রয়োজনীয় জমিতে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার গরীব,দুস্থ অসহায় মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ করে বসবাসকারিদের সহজ শর্তে লীজ দেয়ার আহবান জানান। মানববন্ধন চলাকালে হাওয়ালদার পাড়া এলাকার জাফর আলীর কন্যা এসএসসি পরীক্ষার্থী জিনাত বলেন আমরা সকলেই আতংকে আছি।
আর রেলওয়ে উচ্ছেদ আতঙ্কের কারণে গত কয়েক দিন যাবৎ তিনি ঠিকভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না। আজও তাঁর এসএসসি পরীক্ষা ছিল। সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন মানবতার মা আপনি ভিনদেশী ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেখানে আমরা জন্মসুত্রে বাংলাদেশী নাগরিক। আমাদেরকে যাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ না করে সেজন্য দয়া করুন মা। আমাদের উচ্ছেদ করলে আমরা কোথায় যাব। একই এলাকার মাহতাব উদ্দিনের কন্যা কুলসুম নাজ ও হাফেজ মৃত শাকিলের কন্যা রাইশাসহ অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন আমাদের উচ্ছেদ করা হলে বাবা মা ভাইবোনসহ পরিবারের সকলকে পথে বসতে হবে। বন্ধ হয়ে যাবে সকলের পড়াশোনা।
মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রক্ষা করুন। এদিকে ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা বলছে যেখানে ক্ষণ গননার মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালনে গোটা জাতি প্রস্তুতি নিয়েছে।সেখানে আমরা সৈয়দপুরবাসী মুজিববর্ষ পালনেও নানামুখি কর্মসুচি নিয়েছি। ঠিক এসময়ে আমাদের বসতবাড়ি উচ্ছেদের নামে জনগনের মাঝে আতংক ছড়ানো হচ্ছে। ফলে মুজিববর্ষের উদযাপনের আনন্দ আমাদের মাটি হয়ে যাবে। তারা বলেছে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক।
আমরা কোথায় যাব মা। আমাদের রক্ষা করুন। এদিকে মানববন্ধন চলাকালে অংশ নেয়া অনেক নারী পুরুষ জানান,রেলওয়ের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় অব্যাহত মাইকিং,লাল নোটিশ, বাড়িঘরে লাল কালির চিহৃ দেয়ায় চরম আতংক দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। এসংবাদে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের স্কুল কলেজ পড়ুয়া সন্তানেরা উচ্ছেদ আতংকে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেনা। এ অাতংকে অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। মানববন্ধন ও সমাবেশ চলাকালে উপস্থিত হাজার হাজার নারী পুরুষসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্ছেদ নয়, পুনর্বাসনের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।