খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ সৈয়দপুরে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ (ডিএনবি) নামে একটি এনজিও’র দুই কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে আটক দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপরে থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কর্মী নিয়োগের জামানত ও বেতন এবং গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার যাদুরতাইর গ্রামের আব্দুল মতিন আকন্দের ছেলে ডিএনবি’র সহকারি নির্বাহী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) ও বরিশালের হিজলা উপজেলার বরজারিয়া গ্রামের মৃত ওয়ারেজ আলী হাওলাদারের ছেলে ঢাকাস্থ ডিএনবি’র প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক (৫১)। সূত্রে জানা গেছে, ডিএনবি,র নির্বাহী পরিচালক মো.আব্দুল ওয়ারেছ আকন্দের সরাসরি যোগসাজসে আসামি মো. ফজলুল হক ও মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও ক’জন মিলে এর আগে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে উদ্যোগ নেয়।
এরই অংশ হিসেবে আবারও সৈয়দপুর শহরের বাঙালিপুর এলাকায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ (ডিএনবি) নামে একটি এনজিও’র এরিয়া অফিস খুলেন তারা। পরে আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে শাখা ব্যবস্থাপক, প্রোগ্রাম অফিসার, হিসাবরক্ষক ও ফিল্ড অর্গানাইজার পদে ১৭ জনকে নিয়োগ দেন তারা। বিনিময়ে নিয়োগকৃত এসব কর্মীর প্রত্যেকের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এদিকে বেকারত্ব ঘোচাতে নিয়োগকৃত কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গ্রুপের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করে। পরে কর্মীরা সদস্যদের ঋণ দেয়া হবে বলে তাদের কাছ থেকে সঞ্চয় নেয়। আর এ সঞ্চয়ের আমানত হিসেবে সদস্যদেরও প্রায় ৪ লাখ টাকা ওই এনজিও’র এরিয়া ম্যানেজার আবু আলম সানুর হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে কর্মীরা তাদের বেতন চাইলে তারা টালবাহানার মাধ্যমে কালক্ষেপন করতে থাকেন। এদিকে এভাবে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ করাতো দুরের কথা কর্মীদেরও বেতন ভাতা দেয়া থেকে বিরত থাকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকতারা।
তাদের,কাছে বেতন চাইলে বাজেট এলে বেতন দেয়া,হবে বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। এতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দাবা বেঁধে ওঠে। এদিকে গত সোমবার সন্ধ্যায় তারা জানতে পারেন ডিএনবির ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি টিম প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছে। এ সংবাদে এসব কর্মী একত্রিত হয়ে এরিয়া অফিসে এসে তাদের বেতন ও জামানতের টাকাসহ গ্রাহকের টাকা ফেরত চায় ঢাকার দু কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু তারা বেতন ও জামানতসহ সদস্যদের আমানত ফেরত দিতে টালবাহানা করতে থাকে। উপরোন্ত তারা কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।
এ অবস্থায় কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সৈয়দপুরে আসা ডিএনবির সহকারি নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা মো. ফজলুল হককে আটক করে। পরে বিষয়টি তারা থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে থাবায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ডিএনবির প্রতারণার শিকার ১৭ জন কর্মীর পক্ষে আটক ২ জনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিয়োগ পাওয়া কর্মী মো. মহসিন আলম। মামলায় উল্লিখিত দুজন ছাড়াও যাদের আসামি করা হয় তারা হলেন- ডিএনবির নির্বাহী পরিচালক মো.আব্দুল ওয়ারেছ আকন্দ (৪২), ডিএনবির এরিয়া ম্যানেজার মো.আবু আলম সানু (৪০), ডিএনবি কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী (৫৫)। এ ব্যাপারে মামলার আসামী ডিএনবির এরিয়া ম্যানেজার মো. আবু আলম সানু বলেন, সে নিজেই ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়ে চাকুরি শুরু করেন।
কিন্তু নিয়োগের পর থেকে তিনিও অন্যান্যদের মত জামানত দিয়েছেন। বেতনও পায়নি তখন থেকেই। তিনি বলেন আমিও ডিএনবির প্রতারণার শিকার হয়েছি। বাদি কি কারণে আমাকে আসামি করল আমি জানিনা। জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় দায়ের করা মামলা আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে আসামীদের নীলফামারী কারাগারে পাঠানো হয়েছে।