খবর৭১ঃ করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তবে পরিষ্কার থাকা এবং ঘরের বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রাজধানীর আশকোনার হজক্যাম্পে থাকা চীনফেরত বাংলাদেশি নাগরিকেরা সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে সরকারের সংস্থা। এর মিল পাওয়া গেল হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত একজনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি জানান, তাঁরা সেখানে সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। প্রতিবেলায় তাঁদের ও শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হজ ক্যাম্পে থাকা চীন ফেরত এক বাংলাদেশি মুঠোফোনে বলেন, ‘চীন থেকে আমাদের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আমাদের এখানে যেভাবে রাখা হয়েছে, সেটি কোয়ারান্টাইন পদ্ধতি নয়। আমরা ফ্লোরে আছি, তাতে কষ্ট তো একটু হবেই। তবে কোয়ারান্টাইনে রাখা মানে, নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা। সেটি এখানে হচ্ছে না। এটি হলে ভালো হতো। সবার মনের শঙ্কাটা দূর হতো।’
নয়াদিল্লিতে এক বাংলাদেশিসহ সাত মরিশাস নাগরিককে কোয়ারান্টাইন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা ভারতে এসেছেন। ভারতে ঢোকার পরপরই এই আটজনকে ইন্দো তিব্বতের বর্ডার পুলিশ ক্যাম্পে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২০ চীনা নাগরিকও বিশেষ পর্যবেক্ষণে আছেন। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত এসব চীনা নাগরিককে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ শারীরিক পর্যবেক্ষণ করছেন। সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার। তিনি বলেন, এঁদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ নেই। ১৪ দিনের জন্য বিশেষ তদারকি চলবে।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে আসা ৬ হাজার ৭৮৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মহাখালীর আইইডিসিআরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা বলেন, এঁদের কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গত সোমবার রাতে চীন ফেরত এক বাংলাদেশিকে হজ ক্যাম্প থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর মাথাব্যথা ও কাশি আছে। তবে জ্বর নেই। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আইইডিসিআর সূত্র জানিয়েছে, আশকোনা হজ ক্যাম্পে সবাই সুস্থ আছেন। চিকিৎসকেরা ক্যাম্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কুর্মিটোলায় মাথাব্যথা ও জ্বর নিয়ে ভর্তি থাকা দুজনের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা ব্যক্তিটির লালা সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে। এ ছাড়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনটি পরিবারের আটজন ভর্তি আছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ এখনো চলছে। তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় চীন ফেরত ৮৩৭ যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের মানুষ নতুন ধরনের এক ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকে। ৩১ ডিসেম্বরের দিকে এই ভাইরাসটি একেবারে নতুন বলে বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় ‘২০১৯-এনসিওভি’। চীনের বিভিন্ন শহরে এবং কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে অবশ্য এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তবে ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। করোনাভাইরাস সতর্কতামূলক বার্তায় আইইডিসিআর বলছে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে চোখ, মুখ, নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি হলে শিষ্টাচার পদ্ধতি মেনে চলা, অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শে না আসা, মাছ-মাংস রান্নায় সতর্ক থাকা, ঘরের বাইরে বের হলে নাক-মুখ ঢেকে বের হওয়া এবং জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।