খবর৭১ঃ বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াজ মাহফিলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ -খ্রিষ্টানরা সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অথচ ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাফসির মাহফিল করতে গেলে নিষেধাজ্ঞা আসছে। এতে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।
এটা ঠিক হচ্ছে না। এসময় হৈ চৈ করে তার বক্তব্যে বাধা দেন ও আপত্তি জানান সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে আজকের পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপি দলীয় এমপি হারুনুর রশীদ বিষয়টির সূত্রপাত করতেই সরকার দলীয় সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
এসময় হৈ চৈ করে সরকারি দলের সদস্যরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করার পাশাপাশি ফ্লোর নিয়ে বিএনপির উত্থাপিত অভিযোগের কড়া জবাব দেন। ব্কতব্য রাখেন সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বর্তমান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
হারুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধিত সংবিধানের পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসী হবে এবং যাবতীয় কাজের ভিত্তি এটিই হবে। তবে নতুন সংশোধিত সংবিধান থেকে এটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হিসেবে রাখা হয়েছে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় পূর্বে ছিলো ‘বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম’, সেটির পরিবর্তে সংযোজিত হয়েছে দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে / পরম করুনাময় সৃষ্টি কর্তার নামে। বিষয়টিতে আপত্তিকর। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের প্রকৃত অর্থ সংযোজিত হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, কয়েক দিন ধরে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় একটা বিষয় নিয়ে বির্তক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তাফসির মাহফিলে যে আলোচনা হচ্ছে, কোরআন হাদিসের আলোকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তাফসিরগণ আলোচনা করছেন। সেই সমস্ত আলোচনা নিয়ে আপত্তিজনক কথা বার্তা বলা হচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না।
তার বক্তব্যের জবাব দিতে ফ্লোর নিয়ে সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, দেশের সমস্থ জায়গায় জেলা-উপজেলা জেলা পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, সেখানে আল্লাহ রসুলের কথা বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র জামায়াতীপন্থায় মানুষ যাতে শিক্ষা দিক্ষা না নেয়, যাতে দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত না করে, সেই দিকটাকে আমরা অনেক সময় বলে থাকি। এক্ষেত্রে ইসলামী কার্যকলাপে কোন বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ওনি (হারুনুর রশীদ) জামায়াতপন্থীদের কথা মতো এখানে কিছু কথা উত্থাপন করেছেন। মুষ্টিমেয় কয়েক জন মানুষ জামায়াতীদের পক্ষে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের বিরোধীতা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা থেকে রক্ষার চেষ্টা চলছে। তবে ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে, বাংলাদেশ চিরদিন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে।
হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ওনি (হারুনুর রশীদ) সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বের ন্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করলেন। তিনি বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের ব্যাখা হিসেবে অপব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি। তাদের বলেন, যে ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, বৌ তালাক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে হটাৎ এমন একটি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। যার সঙ্গে সংসদের কার্যক্রমের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা ওরশে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কথা বলছেন।