খবর৭১ঃ চীনে মারাত্মক আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এমনকি বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের কলকাতায়ও শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ভয়াবহ এই ভাইরাস ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বন্দরে জারি করা হয়েছে সতর্ক অবস্থা। এই ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যেন দেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে বন্দরে বন্দরে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।
আগামীকাল বুধবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। নেয়া হবে কার্যকরী ব্যবস্থা। এর অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে সাময়িক গমনাগমন বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র।
জ্বর-কাশি নিয়ে হাসপাতালে চীনা নাগরিক
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোমবার দুপুরে জ্বর ও কাশি নিয়ে একজন চীনা নাগরিক ভর্তি হয়েছেন। তিনি সম্ভাব্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন গুঞ্জন উঠেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে সত্যিই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এখনো সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) নমুনা হিসেবে লালা পরীক্ষা করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ওই বিদেশি নাগরিক চীন থেকে এলেও তিনি উহান প্রদেশে ভ্রমণ করেননি।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত দেশে কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
আটকেপড়াদের আনতে চীনে যাচ্ছে বিশেষ ফ্লাইট
ভয়াবহ এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহরে। সেখানে তিন শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা দেশে ফেরার জন্য নানাভাবে আকুতি জানাচ্ছেন। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। প্রয়োজনে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য এরই মধ্যে চীন সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা এরইমধ্যে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।
তবে, চীন থেকে যাদের ফিরিয়ে আনা হবে তাদেরকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় সরকার সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান শাহরিয়ার আলম।
এদিকে, চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুন্সীগঞ্জে দুজনের আকস্মিক মৃত্যুতে আতঙ্ক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের শরীরে ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে। এই ঘটনার পর এলাকায় করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে নিহতরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান পাটোয়ারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার যশলদিয়া এলাকায় মীর সোহেলের শিশুপুত্র আব্দুর রহমান মারা যায়। এর আগে একইদিন রাত ৮টায় মীর জুয়েলে স্ত্রী শামীমা আক্তার মারা যান। মারা যাওয়া দুজন সম্পর্কে চাচি-ভাতিজা।
নিহত শামীমার স্বামী মীর জুয়েল বলেন, রবিবার সকালে হঠাৎ শামীমার শরীরে ব্যথা অনুভব করলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎকসকে জানাই। পল্লী চিকিৎসক এসে জ্বর হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ওষুধ দিয়ে যান। পরে তার হাত পায়ের আঙুল বাঁকা হতে শুরু করে এবং দাঁত লেগে যায়। একপর্যায় সকাল ৮টায় মারা যান শামীম। একই রাতে ভাতিজা আব্দুর রহমানেরও একইভাবে মৃত্যু হয়।
করোনা ভাইরাস সন্দেহে বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো ভারত
করোনা ভাইরাসবাহী সন্দেহে শওকত আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি যাত্রীকে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় আগরতলা ইমিগ্রেশন তাকে ফেরত পাঠায়। দুই মাস আগে চীন সফর করার কারণে শওকতকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। তিনি ফেনী জেলার সাহেবপুর এলাকার সৈয়দ আহমদের ছেলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা আবদুল হামিদ জানান, সোমবার শওকত আহমেদকে যাবতীয় পরীক্ষা শেষে ভারত ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার শরীরে করোনা ভাইরাস রয়েছে এমন কোনো পরীক্ষা বা প্রমাণ ছাড়াই আগরতলা ইমিগ্রেশন তাকে ফেরত পাঠিয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে চীনে
চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে দেশটিতে এখন আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু হুবেই প্রদেশে এ ভাইরাসে আরও ২৪ জনের মৃত্যু হয়। চীনের এই শহরটিতে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
হুবেই প্রদেশের বাইরে এই ভাইরাসে কারো মৃত্যু না হলেও সারা দেশজুড়ে নতুন করে ৭৬৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অর্ধেকই হুবেই প্রদেশের। দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, আক্রান্ত ৪৬১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কোনো ভ্যাকসিন বের করতে পারেনি গবেষকরা।
এদিকে এই ভাইরাসে ইতিমধ্যে কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়।