খবর৭১ঃ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন দিনভর নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ ও প্রচারণা চালান। দুপুর ১টার দিকে গোপীবাগের সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে সহিংসতার পর প্রচারণায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন সহিংস ঘটনার পর দুপুরে নিজ বাসার নির্বাচনী কার্যালয়ে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে ওরা ভীত-সস্ত্রন্ত হয়ে পড়েছে। তাই আমাদের গণসংযোগে কাপুরুষের মত হামলা করছে। তিনি এ ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, হামলা-গুলি করে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবেনা। আমাদের নেতাকর্মীরা এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়। এ ধরনের হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনকে বানচালের অপচেষ্টায় অংশ হিসেবে এ হামলা হয়েছে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। আমরা ভোটারদের আহ্বান জানাব, আপনারা অবশ্যই পহেলা ফেব্রুয়ারি নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। অধিকার আদায়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
প্রেস ব্রিফিং-এ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আনম এহসানুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, রওনাকুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ইশরাক বলেন, আপনারা শান্ত থাকুন, বিচলিত হবেন না। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না।
এই হামলার কারণে পরবর্তীতে কয়দিন নির্বাচনী প্রচারণায় কোন শঙ্কা বোধ করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘একদমই না। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গুলির শব্দে আমি ভয় পাই না। জনগণের অধিকারের লড়াইয়ে আমি জীবন দিতে প্রস্তুত, রক্ত ঝরাতে প্রস্তুত। মরতে হলে মরবো, তবুও কোন সন্ত্রাসীর কাছে মাঠ ছেড়ে দিবো না।’
হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মতিঝিল এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মহিলা কমিশনার লাভলী চৌধুরী ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। আকস্মিকভাবে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলায় তিনজন সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নয়া দিগন্তের সাংবাদিক ইকবাল মজুমদার (তৌহিদ), সময় টিভির ক্যামেরাম্যান আশরাফুল ইসলাম ও বাংলাভিশনের সিনিয়র ক্যামেরাপার্সন উজ্জ্বল দাস আহত হয়েছেন। আমার উপরে হামলার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আমার নেতাকর্মীরা আমাকে সুরক্ষা দিয়েছে। ’
ইশরাক হোসেনের প্রচারে সংঘর্ষের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ধানের শীষের জয় নিশ্চিত। এই ভয় থেকেই হামলাগুলো শুরু হয়েছে। কিন্তু ভয়কে জয় করতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় দুপুরে তাবিথ আউয়াল এসব কথা বলেন। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পেয়ে আমরা পিছু হটব না। ভয়কে আমরা জয় করব, এ নির্বাচনকে জয় করব। ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবে। সরকার এ রায় ঠেকাতে পারবে না। এরপরই আন্দোলন ত্বরান্বিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, দেশকে মুক্তির পথে নিয়ে আসব। ইশরাকের প্রচারে হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তাবিথ বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বারবার অনুরোধ করছি, আপনারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিন। আগামী ছয় দিন দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এবং ইসির সদিচ্ছা প্রমাণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। এ শহরের অবনতি হয়েছে। দূষণের জন্য কেউ বাঁচতে পারছে না। ভেজাল খাদ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করে দিচ্ছে। সড়কের বিল চলে যাচ্ছে, কিন্তু রাস্তা মেরামত হচ্ছে না। টাকা চলে যাচ্ছে, এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে না। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে।এর আগে বনানীতে পথসভায় তাবিথ আউয়াল বলেন, যেসব ওয়ার্ডে গিয়েছেন, সেসব ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো শুনেছেন এবং সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এক লাখের বেশি নগরবাসী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। নির্বাচিত হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই ঢাকার সমস্যাগুলো মোকাবিলা করবেন বলে জানান তাবিথ।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, অতীতে অনেক নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে, কেন্দ্র দখল হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে হামলা হয়েছে। এসব কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও কমেছে। আমরা ভোটারদের অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব ভোটারদের বলছি, আপনারা সকলে মিলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, নির্ভয়ে ভোট দেবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের মাধ্যমেই বিজয় লাভ করব।
নির্বাচিত হতে পারলে দ্রুত ডেঙ্গু ও বায়ুদূষণ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ। তিনি বলেন, ঢাকা সিটিকে একটি সুন্দর ও আধুনিক সিটিতে রূপান্তরিত করার জন্য সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। মেয়র না হয়েও অতীতে বিভিন্ন সময় ঢাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন জানিয়ে তাবিথ বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকার উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ হবে।
তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী।