খবর৭১ঃ
বছরের শুরুতেই বাজারে পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেল, ডালসহ বেশকিছু নিত্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আমন এলেও চালের দাম বাড়তি। এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিলের শেষের দিকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। আর এই রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে তিন মাস আগেই সরকারের ১০ সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়েছে।
সংস্থাগুলো হল- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিরিং টিম।
সূত্র জানায়, এই সেলের সদস্যরা খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি ও মোকামে অভিযান চালাবে; যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটে ভোক্তাকে ঠকাতে না পারে। এ সময় কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তবে এসব পদক্ষেপের পরও ভোক্তা পর্যায়ে শঙ্কা কাটছে না। তারা বলছেন, প্রতিবছরই একটি চক্র রমজানকে টার্গেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের পকেট কাটে। এবারও একই চিত্র হলে বরাবরের মতো হিমশিম খেতে হবে। তবে সঠিকভাবে তদারকি হলে সুফল আসবে। আর লোক দেখানো হলে এই তদারকি কোনো কাজে আসবে না।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, রমজানে খাদ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবার যাতে তা না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই সজাগ থাকতে হবে।
আর ভোক্তাদেরও মনে রাখতে হবে, রমজান বাদে যে পরিমাণ নিত্যপণ্য তারা কেনেন রমজানেও যেন একই পরিমাণে কেনাকাটা করেন। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য কিনে বাজারে সংকট তৈরি না করেন।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সচেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনতে গিয়ে রাস্তায় চাঁদাবাজির শিকার না হন। এটা বন্ধ করা গেলে সারা বছরই পণ্যের দাম সহনীয় থাকবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানের চাহিদা মেটাতে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এছাড়া ভোজ্যতেল, সোলা, আদা রসুন, খেজুরসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মজুদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। রমজানে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যেন সংকট না হয়, সেজন্য সরকারের একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, এবার কোনোভাবে অসাধুদের সুযোগ দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাজার তদারকি টিম কাজ শুরু করেছে; যাতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাকে ঠকাতে না পারে।
এছাড়া অধিদফতরের টিমের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদারকি সদস্যরা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন) কাজ করছে। টিমের সদস্যরা পণ্যের দাম কমাতে সার্বিকভাবে বাজার তদারকি শুরু করেছে। সদস্যরা মোকাম থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কাজ করছে। এছাড়া ভেজাল ও মানহীন পণ্য উদ্ধারে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, তদারকিকালে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে। এছাড়া জরিমানাসহ জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, বছরজুড়ে আমাদের সার্বিক অভিযান অব্যাহত আছে। রমজান যত ঘনিয়ে আসবে, অভিযান আরও জোরদার হবে। কারণ রমজানে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল খাবার বিক্রি করে। তাই ভেজাল খাবারসহ বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপপরিচালক (গবেষণা) দেওয়ান আসরাফুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজার তদারিকিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমের সঙ্গে আমাদের অফিসাররাও সংযুক্ত থাকে।
বছরের পুরো সময় পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে তদারকি করা হয়। তবে রমজান ঘিরে বাড়তি নজরদারি থাকে। আর এবার রমজান আসার আগেই তদারকি করা হচ্ছে; যাতে রমজানে পণ্যমূল্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
অন্যদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, পেঁয়াজ ইস্যুতে এখনও টিসিবির পক্ষ থেকে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি চলছে। এছাড়া রমজানে আরও কয়েকটি পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হবে। যাতে রমজানে সার্বিকভাবে পণ্যমূল্যের দাম সহনীয় থাকে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, শুধু রমজান নয়, বছরের পুরো সময় ভোক্তাকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে তদারকি টিম কাজ করছে। রুটিনমাফিক অভিযান অব্যাহত আছে। অনিয়ম পেলে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। রমজান সামনে রেখে তারা জোরালোভাবে অভিযান শুরু করেছে।
রাজধানীর নয়াবাজারে মুদি বিক্রেতা মো. ইকরাম বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে রমজাননির্ভর খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। কিন্তু বাজারে এখনই চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও ডালের দাম বাড়তি। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
তা না হলে এবারও ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে এসব পণ্য কিনতে হবে। তিনি বলেন, দাম বাড়ে মিল পর্যায়ে ও পাইকারিতে। আমরা খুচরা বিক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামেই বিক্রি করি। কিন্তু ভোক্তারা আমাদের সঙ্গেই কথাকাটাকাটি করে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এসে আমাদেরই ধরে। এটা না করে সবদিকেই নজর দেয়া উচিত।