খবর৭১ঃ প্রাণঘাতী নতুন এক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে চীনে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ভাইরাসের নাম দিয়েছেন ‘2019-nCoV-Corona (২০১৯-এনসিওভি-করোনা)’। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে ৩ জন এবং থাইল্যান্ডে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন ভ্রমণ শেষে আসা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মার্স-করোনা ভাইরাসের মতো এ ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের জ্বর অনুভূত হয়। জ্বরের তীব্রতা বাড়লে শ্বাসকষ্ট হয়। এরপর নিউমোনিয়া হয় বা হতে পারে। রোগটি ছোঁয়াচে। তবে নতুন এ চীনা ভাইরাস পশু-পাখি নাকি সামুদ্রিক মাছ থেকে সংক্রমিত হচ্ছে সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু রোগটি সংক্রমিত হয়, তাই সবারই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে, হাঁচি-কাশির সময় রুমাল-টিস্যু-গামছা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেয়া। হাঁচি-কাশিরত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা। বারবার দুই হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। সব ধরনের ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়া।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিচালক ‘রোগ নিয়ন্ত্রণ’ অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যুগান্তরকে বলেন, ২০১৯-এনসিওভি-করোনা ভাইরাসের তথ্য আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা চীন থেকে আসছেন- এমন পর্যটকদের হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ ‘থার্মাল স্ক্যানার’র ভেতর দিয়ে আসতে হবে। তাদের শরীরে জ্বরের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা করা হবে।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে যেসব নাগরিকের ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে তারা প্রত্যেকেই চীনের উহান এলাকায় ভ্রমণ করেছেন- এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব নাগরিক উহানের একটি সি-ফুড মার্কেটে কেনাকাটা করতে যান এবং তারপরই আক্রান্ত হন। তবে ওই মার্কেটে সি-ফুডের পাশাপাশি শূকর, ইঁদুরসহ বিভিন্ন পশুপাখি বিক্রি করা হয়। তবে সি-ফুডের মাধ্যমে নাকি অন্য কোনো পশু-পাখির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। যদিও চীন সরকার ইতিমধ্যে ওই সি-ফুড মার্কেটটি বন্ধ ঘোষণা করেছে।
‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের ‘রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. এসএম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, মার্স-করোনা ভাইরাসের মতো ‘২০১৯-এনসিওভি করোনা’ ভাইরাসের লক্ষণ প্রায় একই রকম বলে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রোগীর শরীরে জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তারপর শ্বাসকষ্ট যা তীব্র আকার ধারণ করে নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে। এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু রোগটি নতুন তাই লক্ষণ দেখেই এর চিকিৎসা করতে হবে।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে মার্স-করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত বছরের হজ মৌসুমে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যার মধ্যে ছিলে বিশেষ স্বাস্থ্য কার্ড। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা পর্যটকদের সতর্কতামূলক সেই কার্ড প্রদান করা হতো। সেখানে লেখা ছিল- ‘১৪ দিনের মধ্যে কাশি ও মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে আপনার দেহে মার্স-করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতি সত্ত্বর নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।’