খবর৭১ঃ ইবাদত-বন্দেগি, তাসকিলে তামিল, ধর্মীয় আলোচনা, তসবিহ তাহলিল আর তাবলিগের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বয়ান শোনার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমার জোবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। কাল রবিবার মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব। বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশি মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের।
ইজতেমার আয়োজকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে কয়েকটি মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণসহ নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে বয়ান চলছে। ফজরের নামাজের পর আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বয়ানে দ্বীন, আখলাক, আমলসহ ছয় উসুল নিয়ে আলোচনা হয়।
আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের ইজতেমায় বেশিসংখ্যক মুসল্লির সমাগম হয়েছে। ফলে আখেরি মোনাজাতের এক দিন আগেই মূল ইজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে সড়ক, সড়কদ্বীপ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক মুসল্লি। তীব্র শীত ও কনকনে হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে ধর্মীয় বয়ান শুনছেন তারা। সকাল থেকে ইবাদত-বন্দেগি, খিত্তাভিত্তিক তাসকিলে তামিল, ইস্তেকবাল জামাত, নুরেওয়ালি জামাত গঠন এবং চিল্লাবন্দি হয়ে দেশ-বিদেশে দলনের দাওয়াত ছড়িয়ে দেয়াসহ তাবলিগের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বয়ান চলছে।
দ্বিতীয় দিনে শুধু তাবলিগ কর্মকাণ্ডের ওপর আলোচনা এবং জোটবন্দি হয়ে তাবলিগের ওপর আলোচনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। বিকালে তাশকিল কামরায় চিল্লাধারী সাথীদের জড়ো করে হেদায়াতি বয়ান করা হয়। এসব চিল্লাধারী সাথীরা ইজতেমার পর দেশ-বিদেশে দাওয়াতি কাজে ছড়িয়ে পড়বেন। তাবলিগ জামাতের এ সম্মেলনে অর্ধশতাধিক দেশের দুই হাজার বিদেশি মেহমান ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন।
ইজতেমার মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ জানান, ঘন কুয়াশা আর তীব্র শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা ধর্মীয় বয়ান শুনছেন। বাদ ফজর বয়ান পেশ করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বাদ জোহর মাওলানা ইসমাইল, বাদ আসর ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এবং বাদ মাগরিব ইব্রাহিম দেওলা আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান পেশ করেন।
গত দুই দিন ধরে ইজতেমা মাঠে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন রয়েছেন লাখ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লি। ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরব্বিরা তাবলিগের ছয় ওসুুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করছেন।
রবিবার ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের তাবলিগ কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ জোবায়ের। ইজতেমা শেষে আগত মুসুল্লিরা দ্বীনের দাওয়াতি কাজে দেশ-বিদেশে বেরিয়ে যাবেন।
বাংলায় হেদায়াতি বয়ান ও আখেরি মোনাজাত
বিগত বছরগুলোতে ইজতেমার বয়ান ও আখেরি মোনাজাত হিন্দি ও আরবি ভাষায় করা হলেও এবার আখেরি মোনাজাত ও হেদায়েতি বয়ান আরবির পাশাপাশি বাংলায় দেয়া হবে। আখেরি মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ান পেশ করবেন মাওলানা জিয়াউল হাসান।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণ
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রবিবার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এয়ারপোর্ট থেকে জয়দবেপুর চৌরাস্তা, ঢাকা-সিলেট সড়কের গাজীপুরের মীরের বাজার থেকে টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাস সড়ক পর্যন্ত সড়কে মোনাজাত শেষ হওয়া পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইজতেমা উপলক্ষে ১৬টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সব আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত পাঁচজন মুসল্লি মারা গেছেন। তারা হলেন রাজশাহীর চারগাছ থানার বনকিশোর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক (৬৭), কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার ডিমলা এলাকার তমিজ উদ্দিন (৬৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার বড়তোল্লা এলাকার মো. শাহজাহান (৬০), বরিশালের গৌরনদী থানার খালিজপুর এলাকার আলী আজগর (৭০) ও নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার দক্ষিণ কলাবাগান এলাকার মো. ইউসুফ আলী মেম্বার (৪৫)। এই নিয়ে এবার ইজতেমায় আসা নয়জন মুসল্লি মারা গেলেন। অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে তারা মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ব সম্মেলনের প্রথম পর্ব রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি হবে দ্বিতীয় পর্ব। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায়।