খবর৭১ঃ ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ! ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে আবারো উপস্থিত জানুয়ারির ১০। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর এই তারিখটি বাঙালির কাছে সবচেয়ে আরাধ্য। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সব দ্বিধা-দ্বন্ধের অবসান ঘটিয়ে ’৭২-এর এদিনে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্ত ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে মুক্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবতরণ করেছিল ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের বিমানটি আর এর মাধ্যমেই পূর্ণতা পেয়েছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।
ইতিহাসের পাতা যত খুশি উল্টাতে পারেন, কিন্তু কোথাও, কোন অধ্যায়ে খুঁজে পাবেন না বাঙালির কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। কেউ কেউ টেনে আনবেন সিরাজের কথা। জেনে রাখুন তিনি না বলতেন, না লিখতেন বাংলায়। হাজার বছরের ইতিহাসে এই জাতিকে শাসন করেনি কে? দীর্ঘ সে তালিকায় আছে আফগান, মোঘল, আরব, ইংরেজ, পর্তুগীজ আর এমন কি আফ্রিকার হাবশি কৃতদাসও। নেই শুধু কোন বাঙালির নাম।
পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের বাহিনী যখন ইংরেজদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করছিল তখন তার সমর্থনে আশ-পাশের গ্রামের লোকজন লাঠি-বৈঠা নিয়ে এগিয়ে এলেও হয়তো বাংলার ইতিহাস অন্যভাবে লেখার প্রয়োজন পড়তো। কার্যত তা হয়নি, কারণ বাঙালি ভেবেছে পারস্যের বদলে ইংরেজ শাসক আসছে, তাতে তাদের কি এসে যায়? বঙ্গবন্ধু হলেন সেই ব্যক্তি যিনি হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শুধু স্বপ্ন দেখেই ক্ষ্যান্ত হননি, বরং পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ আর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন।
’৫২, ’৫৪, ’৬৬ আর ’৬৯ পেরিয়ে ’৭০-এর ৭ মার্চ তিনি বাঙালির মুক্তি চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কাজেই ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের বঙ্গবন্ধু বিহীন বিজয় ছিল অপূর্ণ যা পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছিল ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বদেশে বঙ্গবন্ধুর শরীরী উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। আর বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে নাম লিখিয়েছিলেন বাঙালির প্রথম স্বাধীন বাঙালি শাসক হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পস্থায়ী শাসনে বাংলাদেশের ইতিহাস ছিল শুধুই সামনে এগিয়ে চলার আর বঙ্গবন্ধুর বাঙালির নেতা থেকে বিশ্ব নেতায় উত্তরণের।
‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির সেই গৌরব যাত্রার আপাত যবনিকা। এর পরের ইতিহাস বাঙালি আর বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত নাস্তানাবুদ হবার আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদের হাত ধরে জয় বাংলাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে দিয়ে শুধুই পিছনে ছোটার। সেই বাংলাদেশকে এই বাংলাদেশে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটির সূচনা আবারো বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই। ’৯৬-এ শুরু, তারপর আবারো বিরতি। সবশেষ ২০০৯ থেকে বিরামহীন শুধুই এগিয়ে চলা।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল আর বঙ্গবন্ধুর পর আবারো বাংলাদেশের একজন নেতা এখন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে শুধু আর্থ-সামাজিক আর অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে তাই নয়, বরং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যাকাণ্ড আর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেও মুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জয়রথ এখন জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে। সাগরতলে ছুটছে আমাদের সাবমেরিনতো মহাকাশে আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিনাযুদ্ধে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশ, সম্প্রসারিত হয়েছে এর মানচিত্র জলে এবং স্থলে।
আজকের বাংলাদেশ হচ্ছে একটি পরিবর্তিত রাষ্ট্র যে স্বপ্ন দেখে একদিন উন্নত হবার, বিশ্বকে নেতৃত্বে দেয়ার। আর এই নতুন বাংলাদেশের নবযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে এ বছরের ১৭ মার্চ যেদিন শতবর্ষে পা রাখবেন বঙ্গবন্ধু আর তার পরের বছর ৫০-এ বাংলাদেশ। বাঙালির হাজার বছরের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের সবচাইতে বড় অর্জন দুটি নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। কাজেই এবারের ১০ জানুয়ারিতে যে ক্ষণ গণনার সূচনা তা শুধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের গণনাই নয়, বরং এটি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের ক্ষণগণনা যেদিন থেকে পুরাতনের যত জরা আর গ্লানি পেছনে ফেলে বাঙালি আর বাংলাদেশ ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটবে ঊর্ধ্বপানে। এবারের ১০ তাই বরাবরের চেয়ে বাঙালির জীবনে অনেক বেশি তাৎপর্যবাহী।