রাকিব হাসান পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ডের অভিযানে একটি বাল্কহেড বোঝাই ৩২৪ গাইড ভারতীয় শাড়ী জব্দ হওয়ার পর থেকে এর দুই হোতার নাম মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল, বুধবার রাতে ভারতীয় শাড়ীসহ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া ১০জনের কাছ থেকে এ নাম দু’টি ফাঁস হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা এই দুই হোতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এছাড়া কলাপাড়ার একটি মহলের নামও জোরেসোরে উচ্চারিত হয়ে আসছিল। এক যুগ ধরে এই চোরচালানিচক্র কুয়াকাটার এই রুট ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পাচার করে আসছে।
এচক্র চোরাই শাড়ী-কাপড়, বিদেশী মদ, ইয়াবা, চন্দন কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সাগরপথে পাচার করছে। এরা আবার কলাপাড়া থেকে সার ও জ¦ালানি তেল পাচারকারী চক্রের কাছে পৌঁছে দিত। এচক্রটি মাছের ট্রলারে মাছ শিকারের আড়ালে এসব করে আসছে। কলাপাড়ায় বিস্ময়কর উন্নয়ন কর্ম চলছে প্রায় সাত বছর ধরে। তাই অহরহ বাল্কহেডসহ বিভিন্ন ধরনের কার্গো নদী-সাগরসহ রামনাবাদ চ্যানেলে বালু-পাথর লোড-আনলোডের কাজ করছে। কিন্তু এরই ফাঁকে চোরাচালানিচক্র বাল্কহেড ছাড়াও বিভিন্ন যানে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার করে আসছে। ইতোমধ্যে এই রুটে পাচারকালে ইয়াবার বিশাল দুই চালানে সাড়ে ১১ লাখ ইয়াবা জব্দ হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। রিমান্ডে আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।
দক্ষিণের এই সাগরপথকে এরা নতুন ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এচক্র ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে কুয়াকাটা কানেকশন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠেপড়ে লেগেছে। কলাপাড়ায় অন্তত অর্ধশত তরুন-যুবক রয়েছে যারা সাম্প্রতিক সময় দামী এবং নতুন নতুন ব্রান্ডের মটর সাইকেলে ঘুড়ে বেড়ায়। এদের দৃশ্যমান কোন কর্ম নেই। কী এদের আয়। কোথা থেকে এরা নিজেদের এই অর্থ ব্যয়ের যোগান মেলায় তা নিয়ে কলাপাড়ায় মুখরোচক আলোচনা রয়েছে। এরা অধিকাংশ সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের স্বঘোষিত সদস্য হিসেবে নিজেকে জাহির করে বেড়ায়। হাইব্রিড এ চক্রটি এখন আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এচক্রের মাধ্যমে চোরাচালানির কাজ চলে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এদিকে মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমবায় সমিতির নেতা ও কলাপাড়া বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম বেপারী অতি সম্প্রতি কলাপাড়া শহীদ মিনার মাঠে বরিশাল পুলিশের ডিআইজির উপস্থিতিতে মাদক বিরোধী এক সভায় মাদক চালানের এই নৌরুট বন্ধের দাবি জানান। তবে ইয়াবার দুইটি বিশাল চালান আটকের পরে ভারতীয় শাড়ী জব্দ হওয়ার পরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এই এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যথাযথ শণাক্ত শেষে এচক্রের মূল হোতাদের আটক করবেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে মাদকসহ চোরাচালানি এ চক্র কুয়াকাটাকে নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার করে কয়েকদফা সফল হলেও প্রশাসনের নজরদারিতে উপকূলীয় এরুটের নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী অনেকটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছে। মহিপুর ও কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদ্বয় বলেছেন এ চক্র চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে তারা সফল হবেন।