খবর৭১ঃ বিএনপি অংশ নেয়ার কারণে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি একথা বলেন।
মোশাররফ বলেন, বিএনপি অংশগ্রহণ করার কারণেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। কিন্তু এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশন যা বলে, তা তাদের মনের কথা নয়। ‘৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি হয়েছে সেটা সবাই জানেন। বিএনপি অংশগ্রহণ করার কারণেই এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা যেহেতু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই, সেই জন্য আমরা বারবার জনগণের কাছে যাচ্ছি। আর সরকার এবং নির্বাচন কমিশন– তারা পক্ষপাতিত্ব করে, ডাকাতি করে, জোর করে, রেজাল্ট ছিনতাই করে একটি দলের পক্ষে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। এবার সিটি নির্বাচনে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তবে জনগণ সেটা মেনে নেবে না। আমরা বিশ্বাস করি না কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে, কিন্তু আমরা আশা করি না তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।
ইভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রথম থেকেই আমরা ইভিএমের বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা মনে করি বাংলাদেশে ইভিএম পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ যদি কেন্দ্রে যেত; তাহলে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। সেই ভয়ে আগের রাতে তারা ভোট ডাকাতি করেছে। ‘এবার আবার যদি দ্বিতীয়বার এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে, সেই সাহস তারা পাচ্ছে না। তাই তারা মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করার উদ্দেশ্য নিয়ে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নিতে চাচ্ছেন।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এদেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত। এদেশে ইভিএমের মতো কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। এদেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে চায়, মেশিনের মাধ্যমে নয়। ইভিএমের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আপত্তি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, আমরা ইতিপূর্বে বহুবার জানিয়েছি এবং আমাদের নেতারা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন: আমরা এই ইভিএম পদ্ধতি চাই না এবং এর প্রতি আমাদের আস্থা নেই। ‘তাই আমরা এখন মনে করি ইভিএম পদ্ধতি নয়, আমাদের দেশের মানুষ যেই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত এবং যেই পদ্ধতি আমাদের দেশে প্রচলিত আছে; সেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে।’
সরকারের মন্ত্রীরা জোর গলায় বলছেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, আপনারা তাদের এই কথায় আশ্বস্ত কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমার মোটেই আশ্বস্ত নই। আপনাদের মনে আছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দু-দুবার আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম।
‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেখানে কথা দিয়েছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করার পর যেটা করতে পারেনি বা করেনি এখন নির্বাচন কমিশন বা মন্ত্রীরা আশ্বস্ত করলে আমরা বিশ্বাস করবো না, কারণ জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না।’
ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হচ্ছে আপনারা প্রতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন, এই ধরনের কোনো আশঙ্কা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কখনোই নির্বাচনের মাঠ থেকে ফিরে আসিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সর্বশেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। আমরা দেখেছি আমাদের নেতাকর্মীদের ইতোপূর্বে হাজার হাজার মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের বাড়িতে থাকতে দেয়া হচ্ছে না, আমরা নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারছি না।
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মোশাররফ বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন সম্প্রতি কেবিনেটে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটি আইন সংশোধন করা হয়েছে। অতীতে এই আইনের মধ্যে ছিল সরকার প্রয়োজন মনে করলে বছরে একবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বাড়াতে পারবে। কিন্তু এই সংশোধনীর মাধ্যমে যেটা করা হয়েছে সেটা হলো- সরকার ইচ্ছা করলে একাধিকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে।