খবর৭১ঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন অন্যদের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত ও সম্পদশালী।
তাপসের বার্ষিক আয় ৯ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬ টাকা। অপরদিকে ইশরাকের বার্ষিক আয় ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ টাকা। মেয়র পদে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। একজন হত্যা মামলার আসামি।
বছরে এক টাকাও আয় নেই এমন প্রার্থীও রয়েছেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। হলফনামায় প্রার্থীরা শিক্ষা, সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণ দিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় স্বেচ্ছায় সম্পদ ও দায়দেনার বিবরণ দিয়েছেন প্রার্থীরা।
ডিএসসিসির রিটার্নিং অফিসার মো. আবদুল বাতেন বলেন, হলফনামায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ তথ্য গোপন করলে বা অসত্য তথ্য দিলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে। তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীর হলফনামা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
শেখ ফজলে নূর তাপস
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস পেশায় আইনজীবী। বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) ডিগ্রিধারী তাপসের কৃষি খাত থেকে বছরে আয় ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি/দোকান ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা, আইন পেশা থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার এবং চাকরি থেকে বেতন বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৩ টাকা। তার নগদ টাকা ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা। অন্য খাতের মধ্যে ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা, কোম্পানির শেয়ার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকা এবং পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানত ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এর বাইরে তার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এগুলো হল- কৃষিজমি ১০ দশমিক ৫০ কাঠা, অকৃষি জমি ১০ কাঠা (মূল্য ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা), মতিঝিল, পূর্বাচল ও সাভারে তিনটি দালান (মূল্য ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকা) এবং একটি বাড়ি (মূল্য ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৪ টাকা)। আগাম বাড়ি ভাড়া বাবদ তাপস ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা নিয়েছেন।
২০০২ সালে দুদক আইনে এবং ২০০৩ সালে শ্রম আদালতে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছিল। কিন্তু দুটি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। হলফনামায় তাপস তার স্ত্রীর আয় ও সম্পদেরও বিবরণ দিয়েছেন।
প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন
বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে (৪) একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এমএসসি ডিগ্রিধারী ইশরাক চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।
ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার তিনি। তার আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা, চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা ও ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ২৪ টাকা। ইশরাকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৮ লাখ ২ হাজার ৭২ টাকা এবং স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২৪ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নগদ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার বাবদ ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা। তার দায়দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা। এর মধ্যে মা ইসমত আরার কাছ থেকে ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ টাকা তিনি নিয়েছেন। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।
হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন
জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পেশায় ব্যবসায়ী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বশিক্ষিত। তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, দোকান ও অন্যসব প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাবদ ৬৩ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৮ টাকা ও ব্যবসা থেকে আয় ৭২ লাখ ৩০ হাজার ১৮৫ টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকার বীমা, একটি গাড়ি (মূল্য ১৭ লাখ টাকা) ও আসবাবপত্র। তার অকৃষি জমি, দালান ও বাড়ি রয়েছে। সাইফুদ্দিনের ঋণ ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ঋণের পরিমাণ দুই কোটি টাকা।
মো. আবদুর রহমান
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আবদুর রহমান স্বশিক্ষিত। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। দুটি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার নগদ অর্থ ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২ টাকা। তার ৮৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কৃষিজমি, চারতলা একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি রয়েছে।
আবদুস সামাদ সুজন
গণফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সামাদ সুজন এইচএসসি পাস। রাজনীতিবিদ সুজন একটি পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- তিন বিঘা জমি। এছাড়া তার এক লাখ টাকা দামের আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে।
মো. বাহরানে সুলতান বাহার
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. বাহরানে সুলতান বাহার ক্ষুদ্রশিল্প ব্যবসায়ী। তিনি স্বশিক্ষিত। তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রিকস পণ্য। তার কোনো দায়দেনা নেই। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগসহ দুটি মামলা বিচারাধীন। এছাড়া তিনটি মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।
মো. আখতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ
বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ বিএ পাস। তার কোনো আয় নেই। তবে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৫০ মার্কিন ডলার ও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। তার নামে কোনো মামলা ও দায়দেনা নেই।