খবর৭১ঃ নিরাপদ বাহন হিসেবে খ্যাত ট্রেনে ভ্রমণকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু রেলের টিকিট প্রাপ্তি যেন সোনার হরিণ। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রেও পাহাড়সম অভিযোগ। বিশেষ করে ভিআইপির নামে টিকিট সংরক্ষণ (ব্লকিং) ব্যবস্থার জন্য টিকিট পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে সম্প্রতি এই ব্লকিং বন্ধ ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। গত ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকরের জন্য ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিএনএস লিমিটেডকে (অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম), প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) ও প্রধান পরিবহন কর্মকর্তাকে (সিওপিএস) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় রেলওয়ের টিকিটের অপ্রতুলতা দীর্ঘদিনের। এরপরও বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে যে পরিমাণ টিকিট থাকে সেগুলোর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট অনুরোধে ও ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষণ (ব্লক) করে রাখা হয়। তবে সর্বশেষ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত ঈদে ভিআইপি বাদে অন্যান্য টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নিয়েছিল। এবার সারাবছরই টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত টিকিট ৪৮ ঘণ্টা আগে উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে রেলওয়ে।
রেলসূত্র জানায়, রেলের টিকিট বিক্রিতে নানা ধরনের কোটা রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রভাবশালীদের চাপে বিভিন্ন সময়ে নির্ধারিত কোটার বাইরেও টিকিট সংরক্ষণ করতে হয়। চাহিদার তুলনায় রেলের টিকিটের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ বিশেষ ট্রেনগুলোতে নিয়মের বাইরে টিকিট সংরক্ষণের চাপ আসে। নতুন নিয়ম চালু হলে রেলের টিকিট বিক্রি ও স্টেশন কেন্দ্রিক কর্মীরা নাজেহালের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান বলেন, কোটার টিকিটগুলো ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে কত ঘণ্টা আগে রিলিজ করা হবে সেটারও নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে টিকিট কালোবাজারিসহ নানা বিষয়ে রেল প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সকল আন্তঃনগর ট্রেনে সংসদ সদস্য, বিচারপতি, ভিআইপি, প্রতিবন্ধী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য কোটায় নির্ধারিতসংখ্যক সংরক্ষিত আসন ব্যতীত সকল আসন যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিপত্রে আসন সংরক্ষণ বাতিল করতে ৫টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অপরদিকে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রেলভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক পরিচালন পর্যালোচনা সভায় (ওআরএম) কাউন্টারের টিকিট ও অনলাইনের টিকিট এক তারিখে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত টিকিটগুলো ৪৮ ঘণ্টা আগে কাউন্টার বা অনলাইনে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকে ৬২টি টিকিট, মহানগর প্রভাতী ও গোধূলী ট্রেনে ৬০টি করে, সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ৬৮টি করে সর্বোচ্চ পরিমাণে টিকিট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষণ করা থাকে। এর মধ্যে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে বিচারপতিদের জন্য ৪টি, সংসদ সদস্যদের জন্য ৪টি, ভিআইপি ৮টি (স্নিগ্ধা), বিশেষ কোটা ১২টি (স্নিগ্ধা), ভিআইপি ৮টি (শোভন চেয়ার), বিশেষ কোটা ১২টি (শোভন চেয়ার) এবং প্রতিবন্ধী কোটায় শোভন চেয়ার শ্রেণির টিকিট সংরক্ষিত থাকে ২০টি। অন্যান্য ট্রেনে অন্যান্য নিয়মিত কোটার পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কোটা, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য টিকিট সংরক্ষণ করা থাকে