খবর৭১ঃ দলের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে আবারও ঝড় আসছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। আর এই ঝড় বইতে পারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলটির কাউন্সিলকে ঘিরে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে নিজের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নানা কৌশলী পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যেতে পারে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে ‘চেয়ারম্যান’ এবং জিএম কাদেরকে ‘নির্বাহী চেয়ারম্যান’ করার ফর্মুলা এখন জাপার অন্দর মহলে দায়িত্বশীল নেতাদের মুখে-মুখে। শেষ পর্যন্ত এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন হলে সোয়া তিন মাস আগে, অর্থাত্ গত ৭ সেপ্টেম্বর রওশন ও কাদেরকে ঘিরে সৃষ্ট দুটি বলয়ের মধ্যে হওয়া সমঝোতা ভেঙে যাবে বলে মনে করছেন দলের সিংহভাগ নেতা-কর্মী।
শুধু চেয়ারম্যান পদকে ঘিরেই আলোচনা থেমে নেই। নতুন আলোচনা রয়েছে দলের মহাসচিব পদকে ঘিরেও। কাউন্সিলে মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বপদে বহাল থাকতে পারেন, এমন আলোচনা দিনদিন কমে আসছে। এই পদে নতুন করে জোর আলোচনায় রয়েছেন গোলাম মসিহ, তিনি সৌদিআরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন দুইজন সংসদ সদস্য, তারা হলেন জাপার জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু। কারও কারও মুখে সাবেক দুই মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নামও উচ্চারিত হচ্ছে। মহাসচিব পদে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মুখে অন্যদের নাম বেশি শোনা গেলেও দলটির মূল খেলোয়াড়রা বলছেন গোলাম মসিহর কথা।
‘রওশন চেয়ারম্যান, জিএম কাদের নির্বাহী চেয়ারম্যান’- এই ফর্মুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছেও ‘আপনজন’ হিসেবে পরিচিত তিনি গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমেই রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান ও জিএম কাদের নির্বাহী চেয়ারম্যান হচ্ছেন এটা এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক আছে।’ জাপার গঠনতন্ত্রে ‘নির্বাহী চেয়ারম্যান’ পদ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে পদটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, এই ফর্মুলার বিষয়ে জিএম কাদেরও অবহিত। কাউন্সিলের মাধ্যমেও চেয়ারম্যান পদে নিজে বহাল থাকতে গত কয়েকদিন ধরে তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। তবে বহাল থাকতে পারার বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি। সূত্রের দাবি, নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে থাকার প্রস্তাব জিএম কাদের প্রথমে সরাসরি নাকচ করলেও সময়ের ব্যবধানে আস্তে-আস্তে আগ-পিছ ভাবছেন। তবে এবিষয়ে জিএম কাদের সরাসরি কোনো মন্তব্য করছেন না।
জানা গেছে, রওশনকে চেয়ারম্যান করার বিষয়ে তার পক্ষে থেকে ইতোমধ্যে বার্তাবাহকের মাধ্যমে জিএম কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। কাউন্সিলের আগেই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রওশন ও জিএম কাদেরসহ কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দলে ঐক্য চান এমন একাধিক নেতার মতে, দলের কোনো কোনো নেতা জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মেনে জাপার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। সেক্ষেত্রে রওশনকে চেয়ারম্যান করা হলে মনস্তাত্ত্বিক এবিষয়টি থাকবে না বলে মনে করছেন তারা। অন্যথায় দল আবারও ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
প্রসঙ্গত, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ জীবদ্দশায় জিএম কাদেরকে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে লিখিত ঘোষণা দিয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান পদে না রাখার তত্ত্বকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন কাদেরপন্থি নেতাকর্মীরা।
এদিকে মহাসচিব পদে হঠাত্ রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহর নাম আলোচনায় আসার বিষয়ে জানা গেছে, গোলাম মসিহ দীর্ঘদিন ধরেই রওশনের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত। যার কারণে জাপার পদধারী নেতা না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র রওশনের সুপারিশে রাষ্ট্রদূত হয়েছেন তিনি। রওশনের ঘণিষ্ঠজনরা জানান, কার্যত রওশন এরশাদই মহাসচিব পদে মসিহকে দেখতে চান। রওশনের বার্তা পেয়ে আগামীকাল রবিবার সৌদিআরব থেকে গোলাম মসিহ দেশে আসছেন বলে জানা গেছে।