খবর৭১ঃ প্রথমবারের মতো ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির বাইরে গিয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান মুসলিম রাষ্ট্রের নেতাদের এক জায়গায় একত্র করেছে মালয়েশিয়া। বিশ^জুড়ে মুসলিমদের যেসব সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনার জন্য কুয়ালালামপুর সামিট নামের এই সম্মেলন বুধবার শুরু হয়েছে।
তবে সৌদি আরব এই সম্মেলনটি বর্জন করেছে। আর দেশটির অনুরোধে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানও এই সম্মেলনে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে উদীয়মান প্রভাববিস্তারি দেশ ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া কাতার অংশ নিচ্ছে মাহাথির মোহাম্মদের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে।
মালয়েশিয়ার স্টার লাইনের খবরে বলা হয়েছে, কুয়ালালামপুরের স্থানীয় সময় বুধবার রাতে এক নৈশভোজের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এরইমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতারা পৌঁছেছেন। টানা চারদিনের সম্মেলনটি শেষ হবে আগামী শনিবার।
একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে তুরষ্কের আনাদুলু পোস্ট বলেছে, কুয়ালালামপুর সামিটে নেতারা মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর ইস্যু, সিরিয়া ও ইয়েমেনের যুদ্ধ, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবস্থা এবং চীনের উইঘুর মুসলিমদের ক্যাম্পে বন্দি করে রাখার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ‘ইসলাম-ফোবিয়া’ অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম নিয়ে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
এদিকে কুয়ালালামপুরের উদ্যোগে এমন একটি সম্মেলন আয়োজনের নিন্দা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মুসলিমদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য কুয়ালামপুর সম্মেলন সঠিক ফোরাম নয়। দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ মালয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ফোনালাপে মুসলিমদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ওআইসির মাধ্যমে আলোচনা হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি এমন একটি সম্মেলন আয়োজনের কথা প্রথম জানান তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এরপর একই কথা বলেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। পরে সম্মেলন আয়োজনে পদক্ষেপ নেন মাহাথির। তবে শুরুতে উদ্যোগীদের একজন হলেও তার দেশ পাকিস্তান কুয়ালালামপুর সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না বলে জানান ইমরান খান। ইমরান খান এক ফোনালাপে মাহাথির মোহাম্মদকে সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের চাপের কারণেই সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইমরান খান। যদিও পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এটি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকের ধারণা, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান, কাতার ও তুরস্কের কারণে কূটনৈতিকভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ার শঙ্কা থেকেই সৌদি আরব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা চলছে। এছাড়া কাতারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে সৌদি আরব। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামিদ আল থানি কুয়ালালামপুরের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
এদিকে মালয়েশিয়ায় এই সম্মেলন নিয়ে সৌদি আরব ‘খুব উদ্বিগ্ন’ হয়ে আছে বলে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির একটি কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে