খবর৭১ঃ ১০ ডিসেম্বর বনানীতে চীনা নাগরিক গাও জিয়াং হুইকে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেই খুনের কোনো কূলকিনারা করতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। নিজেদের ‘ভাগ্য পরিবর্তন’ করতে গাও জিয়াংকে হত্যা করেন বাড়ির দুই নিরাপত্তাকর্মী।
এই দুই নিরাপত্তাকর্মীকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তার হলেন- আব্দুর রউফ (২৬) ও এনামুল হক (২৭)। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ২১ হাজার টাকা এবং হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, বালতি ও কাঠের টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
আবদুল বাতেন বলেন, বনানীর ২৩ নম্বর রোডের এ ব্লকের ৮২ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন চীনা নাগরিক গাও জিয়াং। আর নিরাপত্তাকর্মী রউফ ও ইনামুল বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় থাকতেন।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, তারা ভাগ্য পরিবর্তনের চিন্তা করতে থাকেন। একপর্যায়ে রউফ ইনামুলকে বলেন, গাও জিয়াং বড় ব্যবসায়ী। তার কাছে অনেক টাকা আছে। তিনি একাই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। তাকে মেরে ফেললে একটা কিছু করা যাবে। এরপর তারা গাও জিয়াংকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৬ ডিসেম্বর গাও জিয়াংয়ের ফ্ল্যাটের দরজার কলিংবেল বাজান তারা দুজন। কিন্তু সে দিন দরজা না খোলায় তারা চলে যানে। পরে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে আবারও গাও জিয়াংয়ের ফ্ল্যাটে যান। বেল বাজালে দরজা খুলে দেন গাও জিয়াং। কিন্তু তিনি বাংলা ও ইংলিশ জানতেন না। তাই কোনো কথা বুঝতে পারছিলেন না। তখন গাও ইশারায় নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে জানতে চান- তারা কেন এসেছেন। এসময় হঠাৎ ইনামুল গামছা দিয়ে গাওয়ের গলা পেঁচিয়ে ধরেন। আর রউফ কোমর জাপটে ধরেন। গাও জিয়াং বাঁচার জন্য ধস্তাধস্তি করতে থাকেন।
একপর্যায়ে তার নাক–মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করে গাও জিয়াংকে ছেড়ে দেন তারা। এরপর তারা ড্রয়িংরুমে থাকা ল্যাপটপ, ব্যাগে থাকা তিন লাখ টাকা, গাও জিয়াংয়ের মোবাইল লুট করে নিয়ে যান। এরমধ্যে রউফ এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ইনামুল নেন এক লাখ ৭৩ হাজার টাকা। রাত ১১টার দিকে রউফের ডিউটি শুরু হলে তিনি বাড়ির পেছনে মাটি খোঁড়ে গাও জিয়াংয়ের লাশ চাপা দেন।
পরে ইনামুল বিকাশে তার টাকা ঝিনাইদহে এক ভাই, বন্ধু ও দুই ভাবির কাছে পাঠিয়ে দেন। আর রউফ তার টাকা নড়াইলে বন্ধুর কাছে পাঠান।
পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে গৃহকর্মী বাসায় এসে গাও জিয়াংয়ের ফ্ল্যাটটি খোলা পান। তার খোঁজ শুরু করলে বাড়ির পেছনে লাশের মাথার চুল ও দুই পায়ের গোড়ালি মাটির বাইরে বেরিয়ে থাকতে দেখেন। পরে গৃহকর্মী ও গাড়িচালক সুলতান আহমেদ বনানী থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে।
নিহত চীনা নাগরিক পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশে চীন থেকে কাপড় আমদানি করতেন।