শাহজাদপুরে ইট ভাটায় পুড়ছে হাজার হাজার টন কাঠ খড়ি, ধ্বংস করছে কৃষি জমি

0
518
শাহজাদপুরে ইট ভাটায় পুড়ছে হাজার হাজার টন কাঠ খড়ি, ধ্বংস করছে কৃষি জমি
ছবিঃ রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি।

খবর৭১ঃ

রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে ইট পোড়াতে কাঠ খড়িই প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঘন জনবসতীপূর্ণ এলাকা এবং কৃষি জমির উপর স্থাপিত এসমস্ত ভাটা মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে পরিবেশ ও ক্ষতি করছে কৃষি জমির। এতে ফসলী জমিতে উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় কৃষকরা।বিশেষ করে গত বছর ইট ভাটার প্রভাবে উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নে শত শত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও কৃষকদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে এইসব ভাটা। ফলে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠছেন। এদিকে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটায় গাছের গুড়ি পোড়ানোয় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে ভাটা সংলগ্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নদী, শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য।

অবৈধ ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বয়স্ক ও শিশুরা। প্রশাসনের কার্যকরি কোন পদক্ষেপ না থাকায় বেপরোয়া মালিকপক্ষ। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই কার্যকর কোন ভূমিকা। উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা, গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর,সরিষাকোল ও পুরান টেপরী গ্রামের মানুষের বসতবাড়ি সংলগ্ন ফসলি জমির মধ্যে গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন ১৬ টি ইট ভাটায় কাঠ খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে । এইসব ইট ভাটার মুল ক্লেন এর পাশেই বিপুল পরিমাণ কাঠ খড়ি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি বাজার সংলগ্ন স্মৃতি ব্রিক্স, মশিপুর গ্রামের এম.বি.বি. ব্রিক্স, এম.এ.এম ব্রিক্সসহ সবগুলো ভাটার মূল ক্লেনের পাশেই শত শত টন কাঠ খড়ি জড়ো করে রাখা হয়েছে। সেখানেই শ্রমিকরা বড় আকারের কাঠের গুলগুলো চেড়াই করে ভাটায় পোড়ানোর উপযোগী করছে।

অপরদিকে উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীর সংলঘ্ন কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে জোড়পূর্বক মাটি কাটার হিড়িক চলছে। আইনের তোয়াক্কা না করে ইট তৈরির কাচামাল হিসেবে ভাটার জন্য ইচ্ছা মতো নদী ও আবাদি জমি থকে মাটি কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। জানা গেছে, প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই একটি প্রভাবশালী মহল গাড়াদহ ইউনিয়নের করতোয়া নদী ও আবাদি জমির মাটি গভীর করে ভেকু মেসিন দিয়ে কেটে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। এক্সেভেটর যন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় পার্শ্ববর্তী আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বেশ কিছু চাষি পরিবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্শ্ববর্তী জমির চাষিরা জানান, ‘যেভাবে মেসিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর বানানো হচ্ছে, তাতে করে আমাদের একমাত্র অবলম্বন আবাদি জমি ধসে নদী হয়ে যাবে। চাষ উপযোগী জমি আর আমাদের থাকবেনা। এতে করে আমরা সব হারিয়ে পথে বসে যাব। এলাকাবাসি আরও অভিযোগ করে বলেন, ইট ভাটার মালিকপক্ষ এবছরের মৌসুমের শুরু থেকেই ইট পোড়াতে কাঠ খড়ি ব্যবহার করছেন। একই সাথে ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় জমিগুলোর ফসল ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং ইট পোড়াতে কাঠ খড়ি ব্যাবহার করায় জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে ।

সমগ্রিক বিষয় নিয়ে শাহজাদপুর ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম চৌধুরির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইটাভাটায় খড়ি ব্যাবহার হয়না। তবে আগুন ধরাতে প্রতিটা ভাটায় কমপক্ষে ৪০০ মণ খড়ি লাগে। এছাড়া যেসব বাংলা ভাটা আছে সেগুলোতে হাজার মণ খড়ি লাগে। তাই এসমস্ত খড়ি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আর কৃষি জমি থেকে দুচারজন ভাটা মালিক মাটি কাটছে। সবাই তো আর কাটছে না। অপরদিকে ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ ছারপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটা আসলে ভাটা মালিকদের ইন্টারনাল বিষয়। এ বিষয় ওপেন করা যাবে না।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা জানান, শাহজাদপুরে ভাটাগুলোর অনুমোদন নেই। এছাড়া ইট ভাটায় ইট পোড়ানোয় কাঠ খড়ি ব্যবহার সরকারি ভাবেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here