খবর৭১ঃ প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রস্তাবিত সার্বজনীন পয়েন্টভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থাপনায় নাখোশ দেশটির বিভিন্ন ইউনিয়ন। এর জের ধরে কয়েক বছরের মধ্যে ফ্রান্সজুড়ে সর্ববৃহৎ ধর্মঘট পালন করছে লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দেরীতে অবসর কিংবা কম পেনশন নিতে বাধ্য করার প্রতিবাদে পেশাজীবী ও শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন। তাদের এ ধর্মঘট চলবে সোমবার পর্যন্ত।
চলমান এ ধর্মঘট সফল করতে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নেমেছেন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। যেখানে অংশ নিয়েছেন পুলিশ, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ১৯৯৫ সালের পর ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ধর্মঘট।
ধর্মঘটের ফলে ফ্রান্সের সড়ক যোগাযোগ, ট্রেন, ট্রাম, রেল ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় মারাত্মক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার অবসর ব্যবস্থা না পাল্টানো পর্যন্ত কাজে ফিরবেন না বলে জানান আন্দোলনকারীরা। ফলে এই কর্মবিরতি নিরসনে কীভাবে কাজ করতে হবে তা ম্যাক্রোঁর জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
টানা তিন দিনের ধর্মঘটে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ। ধর্মঘটের কারণে অনেকেই সাইকেল বা স্কুটার ভাড়া করে সড়ক পথে কাজে যাচ্ছেন।
তবে বেশিরভাগই গাড়ি ভাড়া করে বা নিজের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ফ্রান্সের ইল দ্যু ফ্রান্সসহ হাইওয়েতে শুক্রবার বিকেলে ৫০০ কিলোমিটারের বিশাল ট্রাুফিক জ্যাম তৈরি হয়। এছাড়াও যানঝটে নাকাল হয়ে পড়েছে প্যারিসসহ অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা। বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেলে অলস সময় পার করছেন বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্রান্সে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।
এ অচলাবস্থার একটি সমাধান বের করার দাবি জানিয়েছেন ফ্রান্সের সাধারণ নাগরিকেরা। অন্যদিকে রবিবার স্থানীয় সময় বিকেলে চলমান সংকট নিরসনে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে কিছু মুখোশধারী বিক্ষোভকারী বাসস্ট্যাশন, দোকানে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে এমন খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের ওপর ধর্মঘটের সময়ে পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে নীরব ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কিন্তু এ সংস্থাটিই সাধারণত বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে নিজেদের উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সঙ্কট সমাধানে দ্রুত এগিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু নাকের ডগায় ফ্রান্সে পুলিশের বল প্রয়োগের বিষয়ে নীরব থাকা সংস্থাটিকে ফেলে দিয়েছে সমালোচনার মুখে।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সে বর্তমানে প্রায় ৪২ ধরনের পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এগুলো বিলোপ করে সংস্কারের মাধ্যমে পেনশনকে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।