খবর৭১ঃ এরপর আমরা আর কোনো সমাবেশের অনুমতি নেব না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সকাল ১০টায় পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। সভা-সমাবেশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, তাই যখন ইচ্ছে সভা-সমাবেশ করব।
রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা আজ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশকে লুটতরাজের রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের হাত থেকে দেশ রক্ষার একমাত্র উপায় হল গণঅভ্যুত্থান।
তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। এখন অন্য কোনো স্লোগান না দিয়ে সবাই স্লোগান দেবেন এ সরকার নিপাত যাক।
রোববার ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসারের সভাপতিত্বে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচি কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। সমাবেশ শুরুর দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় যান চলাচলের জন্য একটি লেন করে দেয়া হলেও পরে নেতাকর্মীদের ভিড়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
সরকার ব্যর্থ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার সব কিছুতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা হাজার হাজার পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছে কিন্তু দেশে ছিনতাই-রাহাজানি কমছে না। তারা সড়ক নিয়ে আইন করেছে অথচ রাস্তায় প্রতিদিনই মানুষ এক্সিডেন্টে মারা যাচ্ছে। আজকে ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, শেয়ার মার্কেট লুট করে নিয়েছে, ব্যাংক চলছে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় দলীয়করণ করে নিয়েছে। মিডিয়াও দখল করে নিয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে তারা সরকার চালাতে চায়, দেশ চালাতে চায়। কাজেই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, নিজেদের রক্ষা করতে হয় তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপি পাগল রিজভী হাওলাদারের মৃত্যুতে ফখরুল শোক জানিয়ে বলেন, তাকে সবসময়ই কার্যালয়ে দেখতাম বুকের মধ্যে ‘গণতন্ত্রের মায়ের মুক্তি চাই’ লিখে রাখতেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা ছাড়া তাদের বিকল্প নেই। তাই আজ জাতীয়তাবাদী শক্তি ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে একটা ধাক্কা দিতে পারলে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে। না হলে ২০ টাকার পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি হয় না। কিছু লোককে টাকার মালিক বানাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র বিকল্প হল আন্দোলন। আন্দোলনের কথা শুধু স্লোগান দিলে হবে না, কর্মসূচি দিতে হবে। খুব শিগগিরই আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় নেমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, প্রভুদের খুশি করতে বিনা কারণে খালেদা জিয়াকে কারা অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করে তাকে বের করে আনতে হবে। দেশের জনগণ জেলের তালা ভেঙে নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ সরকার থাকলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তাই প্রথমে প্রয়োজন সরকারের পতন। সমাবেশ বা জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। ’৭১-এ স্লোগান দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়নি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বহুদিন কষ্ট করেছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। এখন রাজপথে নামতে হবে। অধিকার আদায় করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে দেশে আইনের শাসন নেই সেখানে আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। সারা বিশ্বে গণতন্ত্রেও মহানায়করা যেভাবে মুক্ত হয়েছেন খালেদা জিয়াকেও সেভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।
দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম ও মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল্লাহ হাসান সমাবেশ পরিচালনা করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, বজলুল বাছিত আঞ্জু, নবী উল্লাহ নবী, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের রফিকুল আলম মজনু, শফিকুল আলম মিল্টন, এসএম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিন।