খবর৭১ঃ শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে বদলির জন্য যারা তদবির করেন তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এটাকে দুর্নীতি ও অপরাধ আখ্যায়িত করে তদবিরবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষ সামাজিক উদ্ধুব্ধকরণ ও সচেতনতামূলক এ সভার আয়োজন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজামান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দুদক চেয়ারম্যান।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়ায় কী হয় আমরা জানি। সেই কারণে আমরাও বলেছি, সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে। কম্পিউটারই বলে দেবে, রহিম কোথায় যাবে, করিম কোথায় যাবে। ক্রাইটেরিয়া ফিস্কড করবেন, কম্পিউটার বলে দেবে কে কোথায় যাবে। বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে, কোনো তদবির চলবে না। তদবির এক ধরনের অপরাধ। তদবির একটা দুর্নীতি।’
তদবিরবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই। যে কারণে কিছু কিছু তদবিরবাজকে আমি ধরেছি। জেলে ভরেছি। তদবিরবাজরা সাবধান! প্রাইমারি স্কুলের বদলির ব্যাপারে তদবরি করবেন, আপনার সমস্যা। আমি এটা হুঁশিয়ারি দিতে চাই। আপনি হাওরে কেন যাবেন না, আপনি চাকরি করতে এসেছেন? আপনাকে হাওরে যেতে হবে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ হতে হবে। আপনার এবার দেখেছেন পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমরা অনিয়ম বন্ধ করতে পেরেছি। আমি পুলিশকে সাধুবাদ দিয়েছি। ধন্যবাদ দিয়েছি যে, তারা একেবারে দুর্নীতিমুক্তভাবে, কারও কথা না শুনে পুলিশের নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষকও নিয়োগ হবে, কারও তদবিরে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো দুর্নীতি সহ্য করা যাবে না। আমরা সহ্য করব না।’
দুদকের কেউ হাত বেঁধে রাখেনি উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষকের পেনশন নিতে গিয়ে কী ভোগান্তি! সেটা আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। যারা অপরাধী তাদেরকে আমরা ধরেছি। আমরা ঘুষ হাতেনাতে ধরেছি। আমাদের কেউ হাত বেঁধে দেয়নি। আমরা যেকোনো লোককেই ধরতে পারি। দুর্নীতি করলেই ধরা হবে। কোনো অনুমতি নিয়ে আমরা কাউকে ধরব না। আমরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।’
তবে এতেও খুব একটা লাভ হয়নি বলেই বক্তব্যের শুরুতে উল্লেখ করেন ইকবাল মাহমুদ। বলেন, ‘ধরে ধরে জেলে পুরাটা দুদকের বড় কাজ না। দুদকের বড় কাজ হচ্ছে, দুর্নীতি যেন না হয় সেই কাজটা করা। আমি গত সাড়ে তিন বছরে দেখলাম, অনেক দুর্নীতিবাজ ধরে জেলে পুরা হলো। কিন্তু লাভের লাভ তেমন কিছুই হলো না। শেষ পর্যন্ত আমরা কাছে মনে হয়েছে, যে আমরা দুটো জায়গায় মনে হয় কাজ করতে হবে। একটা হচ্ছে প্রাইমারি স্কুল, আরেকটা হাইস্কুল।’
‘আমার কাছে মনে হয়েছে মানসম্মত শিক্ষা পেলে একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না যদি সে প্রাইমারি স্কুলে সততার সাথে, শিক্ষকের কথা শুনে, মা-বাবার কথা শুনে পড়াশোনা করে। সে বড় হয়ে দুর্নীতিবাজ হতে পারে না।’
এজন্য দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেন। আর শিক্ষকদের যেন শুধু নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানো না হয় সে জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মনজুর কাদির ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। আর স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম।
সভায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় তারা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।