খবর৭১ঃ ২০২০ সালটা হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম এক বছর। এই বছরে ১৩টি টেস্ট, একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং অনেকগুলো সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এমন সুযোগ সব সময় আসে না। দেশের টেস্ট ও টি- টোয়েন্টি অধিনায়ক এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন দারুণ ফর্মে। তাই অনেকেই বলছিলেন, এই বছরটা হতে যাচ্ছে সাকিবের বছর।
কিন্তু হায়! সেই সাকিব আল হাসানই এক বছরের জন্য অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে ‘নেই’ হয়ে গেলেন।
সাকিবকে ছাড়াই বুধবার ভারত গেল বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল। বিমানবন্দরে তাকে ছাড়া খেলতে যাওয়ার আগে রীতিমতো হাহাকার করেছেন নতুন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ফেসবুকে বাংলাদেশ দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ের লেখাতেও এই হাহাকার। শুধু ক্রিকেটার কেনো, ষোলো কোটি বাংলাদেশির কণ্ঠে এখন এই এক হাহাকার। সাকিবকে ছাড়া আগামী এক বছর চলার দুশ্চিন্তা।
এর মধ্যেও নিজেদের যতদূর সম্ভব সামলে নিষেধাজ্ঞা শেষে সেরা সাকিবকে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন এবং বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস অভিন্ন কণ্ঠে বললেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ামাত্র যেন সেরা ফর্মের সাকিবকে পাওয়া যায়, সে জন্য যা যা করণীয় করবেন তারা।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো, তিনি কোনো ধরইের স্বীকৃত ক্রিকেটীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। সাধারণত এরকম ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বোর্ডও নিষিদ্ধ খেলোয়াড়কে জিমসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে দেওয় না; কিন্তু সুজন বলছিলেন, তারা চেষ্টা করবেন সাকিবকে এই সুবিধাগুলোর মধ্যেই রাখার, ‘আমাদের মাননীয় সভাপতি পরিষ্কার বলেছেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা শেষেই সেরা ফর্মের সাকিবকে চাই। আর পেতে গেলে সাকিবকে অনুশীলনের মধ্যে এবং জিম বা অন্যান্য সুবিধার মধ্যে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে আইসিসির কোনো বাধা না থাকলে তাকে এসব সুবিধা দেওয়া হবে।’
একই বিষয়ে জালাল ইউনুস একটি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, তারা চান সাকিব নিজেকে যেন প্রস্তুত রাখতে পারে, ‘ট্রেনিংয়ের সুযোগ দেওয়া বিসিবির ব্যাপার বলেই আমরা জানি। তো সেই সুযোগ আমরা সাকিবকে দেব। অবশ্যই কোনো দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে না, এখানে আইসিসির নিষেধ আছে; কিন্তু আলাদা করে ট্রেনিং করার সুযোগ সে পাবে। আমরা চাই সে নিজেকে প্রস্তুত রাখুক। এক বছর পর যখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে, তখন যেন সে প্রস্তুত থাকে মাঠে নামতে।’ এই প্রস্তুত থাকার একটা বড়ো অংশ হলো ম্যাচ খেলতে পারা। নিষেধাজ্ঞার সময়ে স্বীকৃত ম্যাচ খেলার প্রশ্ন আসে না; কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটা ব্যতিক্রমী উদাহরণ আছে। মোহাম্মদ আমিরের নিষেধাজ্ঞার শেষ দিকে তাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী সুজন বলছিলেন, তারা এই উদাহরণ সামনে নিয়ে সাকিবের জন্য এগোতে চাইবেন, ‘আমরা তো চাই, সে যেন নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারে। সে জন্য যদি কোনো সুযোগ থাকে তার খেলার, সেটা আমরা করে দিতে চাই। এ রকম (আমিরের মতো) রেফারেন্স থাকলে সেটাকে আমরা আইসিসির কাছে আবেদনের সময় ব্যবহার করব। আমাদের কথা একটাই—সাকিবকে সেরা ফর্মে ফেরত চাই আমরা।’ তবে এর মধ্যে সাকিবকে আরেকটা দুঃসংবাদ হয়তো পেতে হবে। তিনি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এই এক বছর থাকতে পারবেন না হয়তো।
এ ব্যাপারে এখনো বোর্ড নিশ্চিত নয়। তবে আইন বলে, নিষিদ্ধ ক্রিকেটারকে চুক্তিতে রাখা যায় না। এ ব্যাপারে পরে মন্তব্য করবেন বলে সুজন বললেন, ‘এটা তো নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বোর্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই এখনই মন্তব্য করতে পারছি না।’