খবর৭১ঃ টাকা পাচার থামছে না, বরং সুযোগ থাকায় পাচারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো মর্টগেজ ছাড়াই ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। এসব টাকা বিদেশে পাচার করে কেউ কেউ মার্কেট বানিয়েছেন। শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতারাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। এসব দুর্নীতিবাজ ধরা পড়বেন, নাকি চুনোপুঁটি ধরেই অভিযান শেষ হয়ে যাবে—এমন অনেক প্রশ্ন দেশবাসীর পাশাপাশি পলাতকদেরও। চলমান অভিযানের আওতায় আসছেন ব্যাংক লুটপাটকারী ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতারা।
টাকার পাহাড় গড়া অনেকে চলমান অভিযানের মধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কেউ আছেন সিঙ্গাপুরে, কেউ মালয়েশিয়ায় আবার কেউ কেউ গেছেন ইন্দোনেশিয়ায়। সিঙ্গাপুরে পালিয়ে থাকা এমন এক ডজন লোকের সঙ্গে ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির কথা হয়। তারা কীভাবে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন, এখনো চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির টাকার ভাগ বসদের কীভাবে দেন—সবকিছুই বিস্তারিত তুলে ধরেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমাদের বসরা হলেন মাফিয়া। তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রের বড়ো আর্থিক ক্ষতির কারণ এমন লোকজন কেন বহাল তবিয়তে থাকবেন? ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী এবং ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখলকারী এমন মাফিয়ারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতারাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?’ তারা আরো বলেন, ‘আমরা টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করে টাকা কামাই করেছি ঠিকই, কিন্তু ঐ টাকার ভাগ তো অনেককে দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তাদেরও টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা তো সব জানেন, আমরা কীভাবে টাকা কামিয়েছি।’ তবে তারাও অভিযানের আওতায় আসবেন বলে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে পলাতক থাকা যুবলীগের নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বিএনপির নেতাসহ আরো অনেকে আছেন, যারা নিয়মিত মেরিনা বে ক্যাসিনোতে যান। সেখানে ক্যাসিনো খেলা অবস্থায় ১০ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তবে তারা নাম প্রকাশ না করতে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘জীবন নিয়ে পালিয়ে এখানে এসেছি। আমাদের বাঁচতে দেন।’
জানা গেছে, ব্যাংকে লোন পেতে হলে মর্টগেজ লাগে। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালী কারো সহায়তায় ঋণ পেয়েছেন, যে কারণে তারা ঋণ ফেরত না দেওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। এতে টাকাগুলো বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করায় তারা ঋণখেলাপি হয়েছেন। আরো একটি কারণ আছে, তা হলো বাইরের চাপে কাজটি করা। এখানে রাজনীতি প্রধান কারণ। অর্থাত্, যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন, তাদের সমর্থিত লোকজন জোর করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যান। এভাবে ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বিদেশে মার্কেট বানিয়েছেন এমন একজনের নামের আদ্যক্ষর ‘এস’। তিনি ব্যবসাজীবনের শুরুতে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কারণ তিনি ছিলেন জামায়াতের রাজনীতির ঘরানার। এ কারণে ইসলামী ব্যাংক সহজে তাকে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন। আর তিনি মাসে দুই-একবার দেশে আসেন, বেশিরভাগ সময় সিঙ্গাপুরে থাকেন। এক নায়িকা বান্ধবীকেও তিনি সেখানে মূল্যবান অ্যাপার্টমেন্ট উপহার দিয়েছেন। তবে সিঙ্গাপুরে তার নির্মাণাধীন বিশাল মার্কেট-হোটেলটি মোস্তফা মার্কেটের কাছাকাছি। স্মরণকালের ভয়াবহ দুটি শেয়ার কেলেঙ্কারি ঘটনার হোতারাও সিঙ্গাপুর, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা ব্যবসাসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করেছেন।
সারা রাত সিঙ্গাপুরে যে কয়টি এলাকা জেগে থাকে, তার মধ্যে মেরিনা বে উল্লেখযোগ্য। এর ভেতরে দিন কি রাত কিছু বোঝার উপায় নেই। এ যেন এক ভিন্ন জগত্। রোবট সেখানকার পুরো চত্বর ঘুরে বেড়াচ্ছে জুস, পানি, কফি, চা ও বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে। মেরিনা বে-তে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা দেখা গেলেও মূলত ভিআইপি খেলোয়াড়েরা সবার অগোচরে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বিশেষ কেবিনে আয়েশিভাবে খেলেন। ফলে কে কী করছেন জানতে পারে না অন্য কেউ। তাদের সঙ্গে আসা অতিথিরাও বিনা মূল্যে আপ্যায়িত হন মদ-বিয়ারসহ ভারী খাবারে।