জিপি-রবিতে প্রশাসক বসানোর পদক্ষেপ; উদ্বিগ্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

0
497
জিপি-রবিতে প্রশাসক বসানোর পদক্ষেপ

খবর৭১ঃ

দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটায় প্রশাসক বসানোর পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) এক সভায় গত সোমবার এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সংগঠনটির সূত্র জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে সরকারকে একটি চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের উদ্বেগের মূল বিষয় প্রশাসক নিয়োগ। ফরেন চেম্বার নামের প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের আশঙ্কা, গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক নিয়োগের মানে হলো, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের লোক বসিয়ে দেওয়ার একটি উদাহরণ তৈরি করা, যা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ভালো হবে না।

গ্রামীণফোন ও রবির কাছ থেকে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অপারেটর দুটিতে প্রশাসক বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামীণফোনের ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা করে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও রবির ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা করে ৮৬৭ কোটি টাকা দাবি করছে বিটিআরসি।

সংস্থাটি বলছে, রাজস্বের ভাগাভাগি, কর ও অন্যান্য খাতে এ পাওনা দাঁড়িয়েছে। যদিও দুই অপারেটর নিরীক্ষার পাওনা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে আসছে। তারা চায়, পাওনা নিয়ে সালিস হোক। পাওনা আদায়ের দুটি পদক্ষেপ নিয়ে সফল না হওয়ায় বিটিআরসি দুই অপারেটরে প্রশাসক বসানোর উদ্যোগ নেয়।

এর অংশ হিসেবে ৫ সেপ্টেম্বর গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স (টু-জি ও থ্রি-জি) কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, দুই অপারেটরে প্রশাসক বসানোর জন্য বিটিআরসিকে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরপর সোমবার এফআইসিসিআইয়ের মাসিক পর্ষদ সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম বলেন, ‘আমরা চাই বিষয়টি সমাধানের দিকে আগাক। এ জন্য নীতিনির্ধারকদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে এফআইসিসিআইয়ের কিছু করার থাকলে, কোনো মধ্যস্থতা করার থাকলে, সে দায়িত্ব আমরা পালন করতে চাই।’ এফআইসিসিআইয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা ১৮৮।

এদিকে সূত্র জানিয়েছে, দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ। তারা বলেছে, নিরীক্ষা দাবি নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। তবে তারা বিশ্বাস করে, বিষয়টি এমনভাবে সমাধান হওয়া উচিত, যা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।

অবশ্য মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত রাতে বলেন, ‘আমি কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করি না। দেশের প্রচলিত আইনে পাওনা আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে, হেরে যাচ্ছে। তারপর আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকত, যদি তাদের প্রতি কোনো অন্যায় বা বেআইনি কাজ করা হতো।

জিএসএমএ কোনো চিঠি দিয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যত জনই চিঠি দিক, আমি আমার দিক থেকে যতক্ষণ ন্যায়সংগত কাজ করছি, ততক্ষণ আমার উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও দুই অপারেটরের বৈঠকের পর পাওনা আদায় নিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা শীতল হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। গত সোমবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এ নিয়ে কোনো পক্ষই কথা বলছে না। এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন।

শেহজাদ মুনিম বলেন, ‘যেহেতু সরকারের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন অংশীজন এ বিষয়ে যুক্ত হয়েছেন, আমরা আশা করছি বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।’

রবির আবেদনের আদেশ কালঃ

বিটিআরসির পাওনা দাবি আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রবি আজিয়াটার করা আবেদনের বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে রবির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও কাজী এরশাদুল আলম। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব।

আইনজীবী সূত্র বলছে, পাওনা দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে রবি নিম্ন আদালতে মামলা করে। এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে রবি। নিষেধাজ্ঞার আবেদনটি গত ২৭ আগস্ট নামঞ্জুর হয়। এর বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করে রবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here