খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মৃত. সোলায়মান আলী বসুনিয়ার স্ত্রী ও তিন সন্তানের ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে। স্কুল শিক্ষক মো. সালাউদ্দিন দুলু ও শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মচারী মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে জমি দখলের ওই অভিযোগ মিলেছে ।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মিনারা বেগম বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল যান। পরবর্তীতে উভয়পক্ষকে জমির বৈধ কাগজপত্র নিয়ে থানা আসতে বলা হয়। এদিকে, জমির কাগজপত্র দেখে গতকাল শুক্রবার অভিযুক্তদের জমির দখল চেষ্টার কাজে ব্যবহৃত নতুন ঢেউটিনসহ অন্যান্য উপকরণ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত তারা দখল কাজে ব্যবহৃত ঢেউটিন সরিয়ে নেয়নি বলে জানা গেছে। থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দপুর শহরের পুরাতন বাবুপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী বসুনিয়ার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী মোছা মিনারা বেগম নিজের এবং তিন সন্তানেরা সৈয়দপুর-পাবর্তীপুর সড়কের পাশে জমির মালিক জনৈক সরওয়ারদী আলমের কাছে পুরাতন এস. এ. দাগ ১১৮৮ এবং বর্তমান নতুন ৫৬৬২ ও ৫৬৬৩ দাগে ৭ শতক জমি কবলা দলিলমূলে ক্রয় করেন। ঘটনার দিন গত ১৪ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর ছোট ছেলে ব্যাংকার মো. সৌরভ বসুনিয়া জমির বর্তমান দাগ ও নক্শা অনুযায়ী আমিন (জমি পরিমাপক) নিয়ে তাঁদের ক্রয়কৃত জমির সীমানা চিহিৃত করে বাঁশের খুঁটি স্থাপন করেন। আর এ খবর পাওয়ার পরেই ওই দিন সন্ধ্যায় জমির পাশের দাগের মালিক স্কুল শিক্ষক সালাউদ্দিন ও সৈয়দপুর শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মচারী মো. আবুল কাশেম তাদের লোকজন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সোলায়মান আলী বসুনিয়ার স্ত্রী ও সন্তানের নামে কেনা জমির সীমানা খুঁটি উপড়ে ফেলেন।
পরবর্তীতে তারা সেখানে নতুন ঢেউটিন দিয়ে সীমানা ঘিরে নিয়ে চালা ঘর নির্মাণ করেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অভিযুক্তরা বিবাদমান জমিটি নতুন ঢেউটিন দিয়ে ঘিরে সেখানে একটি টিনের চালা ঘর তৈরি করে রেখেছেন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা মৃত. সোলায়মান আলী বসুনিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম জমি দখলের চেষ্টাকারী স্কুল শিক্ষক সালাউদ্দিন ও শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মচারী মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে গত ১৪ অক্টোবর রাতে সৈয়দপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে ওই রাতেই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানের জমি দখলের চেষ্টাকারীদের কাজ বন্ধ করে দেন । পরবর্তীতে তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কথা হয় জমি দখলের চেষ্টার কাজে অভিযুক্ত আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানের কেনা জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেন, আমরা যখন জমিটি ক্রয় করি তখন পুরো জমিটির একটি মাত্র এস,এ দাগ ছিল। আর সেই এস, এ দাগ নম্বর হচ্ছে ১৮৮৮। বর্তমানে একটি দাগ ভেঙ্গে তিনটি দাগ হয়েছে। তাছাড়া আগে থেকে আমরা কেনা জমির অংশে ছোট আকারে পাকা সীমানা প্রাচীর দিয়ে রেখেছি। তখন তো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কোন আপত্তি তোলেননি। এখন নতুনভাবে তারা ওই জমির অংশ তাদের বলে দাবি করছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মিনার বেগম বলেন, আমার ও সন্তানদের নামে কেনা জমি অংশের কবলা দলিলে নতুন দাগ ও চৌহদ্দি উল্লেখ করা রয়েছে। অথচ পৃথক দাগের কেনা জমির মালিক এসে আমাদের দাগের জমি তাদের বলে দাবি করছেন।
এটি তাদের অযৌক্তিক দাবি ছাড়া আর কিছু নয়। তারা শুধু শুধু ঝামেলা করার চেষ্টা করছেন। সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একরামুল হক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানের জমি দখলের চেষ্টার ঘটনার সুষ্ঠু সমাধনের জন্য আইনশৃংখলাবাহিনীর প্রতি দাবি জানান। সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আতাউর রহমান মৃত. মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানের জমি দখলের চেষ্টার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের বিবদমান জমি দখলের কাজে ব্যবহৃত ঢেউটিনসহ সকল অবকাঠামো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।