খবর৭১ঃ বাংলাদেশ দুটি শর্ত পূরণ করতে পারছে না বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আটকা পড়েছে।
শর্ত দুটির একটি হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অর্গানোগ্রাম অনুমোদন। অপরটি বীমা প্রবিধানমালা জারি। এডিবির এই সহায়তা দিয়ে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা।
শর্ত দুটি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি এডিবির কার্যালয় থেকে তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে। বাংলাদেশকে এ সহায়তা দেয়ার জন্য তিন দফা সময় বাড়িয়েছে এডিবি। ডিসেম্বরে সহায়তা পাওয়ার সময় শেষ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেট সহায়তা পেতে এডিবি দ্বিতীয় ধাপে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল। ইতিমধ্যে ১৪টি পূরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি শর্ত পূরণের প্রক্রিয়া চলমান। আশা করছি সেগুলো দ্রুত পূরণ হবে। শর্ত পূরণ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
সূত্রমতে, পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বাজেট সহায়তার জন্য ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮৫ টাকা) সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় এডিবি। এই অর্থ দুই কিস্তিতে ছাড় করতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে এডিবি।
ওই চুক্তিতে এ সহায়তা পেতে এডিবি বাংলাদেশকে ২৬টি শর্ত বেঁধে দেয়। এর মধ্যে ৮টি শর্ত পূরণ করলে ২০১৫ সালে সহায়তার ৮ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় করে এডিবি। বাকি ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা পেতে ১৮টি শর্ত পূরণ করতে বলা হয়।
এ শর্ত পূরণের ওপর বাকি টাকা পাওয়া নির্ভর করছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, দুটি শর্ত ছাড়া ১৬টি পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূরণ না হওয়া শর্ত দুটির মধ্যে বিএসইসির অর্গানোগ্রাম অনুমোদনে সচিব কমিটিতে পাঠানোর জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপর শর্ত বীমা (লাইফ ও নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা জারির অপেক্ষায় আছে। এটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব শর্ত পূরণ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা না হওয়ায় এডিবির পক্ষ থেকে তিন দফা সহায়তা প্রদানের সময় বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো সর্বশেষ সময় ছিল গত ৩০ জুন।
কিন্তু ওই সময় শেষ হলেও শর্ত পূরণ না হওয়ায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এডিবি একটি চিঠি দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে। ওই চিঠিতে শর্ত পালনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এডিবির শেষ শর্ত অনুযায়ী বীমার প্রবিধানমালার খসড়া প্রণয়ন করার পরও আপত্তির কারণে তা জারি করা সম্ভব হয়নি। কারণ খসড়া নীতিমালায় লাইফ ও নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে সম্পদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিধান রাখা হয়।
কিন্তু বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ বিধানে আপত্তি দিয়ে বলেছে- নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্রে এ বিধান বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ লাইফ ও নন-লাইফ বীমা ব্যবসা সম্পূর্ণ পৃথক। এ ক্ষেত্রে লাইফ বীমা ব্যবসা সাধারণত ১০-১৫ বছর মেয়াদি হয়।
অন্যদিকে এক বছর মেয়াদি হয় নন-লাইফ বীমা। পাশাপাশি যে কোনো সময় দাবি উত্থাপন করলে নন-লাইফ বীমা তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নিতে হয়। ফলে নন-লাইফ বীমার সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাস্তবসম্মত নয়।
একই বিধানে আপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের মতে, সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে করতে হয়। কিন্তু নন-লাইফ বীমা ব্যবসার পলিসি সাধারণত এক বছর মেয়াদি হয়।
যদি সরকারি সিকিউরিটিজে সম্পদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশই বিনিয়োগ করতে হয় তাহলে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের রাখা বিভিন্ন ব্যাংকের এফডিআর ভেঙে সে টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নন-লাইফ বীমার সম্পদের ৫ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, এই আপত্তির কারণে বীমা প্রবিধানমালার খসড়া আটকে যায়। অপরদিকে এডিবির শর্ত পূরণেও সময় পার হতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। ওই বৈঠকে শেষ পর্যন্ত নন-লাইফ বীমা সম্পদের ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৫-১০ শতাংশ বিনিয়োগে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
এ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় অর্থমন্ত্রীর কাছে। অর্থমন্ত্রী এটি অনুমোদন দিয়েছেন। এখন সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নন-লাইফ বীমার একটি বিধান ঠিক করতে গিয়ে বিলম্ব হয়েছে। এটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং শেষ করে আসার পর জারি করা হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচিতে (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৩০ কোটি ডলার সহায়তা দেয় এডিবি। ১৫ কোটি করে দুই দফায় ৩০ কোটি ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এ জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মোট ২৮টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয় সরকারকে।