হাবিবুর রহমান নাসির, ছাতক প্রতিনিধিঃ দোয়ারায় কলেজ পড়–য়া কন্যার আত্মহত্যার জন্য তার কথিত প্রেমিককে দায়ি করছেন আত্মহননকারী ছাত্রীর মা ও তার পরিবার। তাকে আত্মহননে বাধ্য করা হয়েছে বলে কলেজ ছাত্রীর চাচা আদালতে কথিত প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শারপিন পাড়া গ্রামে। আদালতে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, শারপিনপাড়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মামন মিয়ার কন্যা নুরজাহান বেগম ছাতক কলেজের ১ম বর্ষের একজন ছাত্রী। প্রতিদিন প্রায় ১২ কিমি পথ অতিক্রম করে নুরজাহান বেগম কলেজে আসা-যাওয়া করতো। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই উত্যক্ত করতো পাশের গ্রাম সোনাপুরের আব্দুর রশিদের বখাটে পুত্র বারকি শ্রমিক আলমগীর হোসেন। এক পর্যায়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বখাটে আলমগীরের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে নুরজাহান বেগম বিষয়টি তার মা রাবিয়া বেগমকে অবহিত করে।
কলেজ পড়–য়া মেয়ের কলেজে আসা-যাওয়ার পথে তাকে বিরক্ত না করার জন্য আলমগীরের মা সোজানা বেগমকে ঘটনাটি জানিয়ে পুত্রকে নিয়ন্ত্রনে রাখার পরামর্শ দেন রাবিয়া বেগম। গত ১৯ আগষ্ট সন্ধায় রাস্তা থেকে মা রাবিয়া বেগম ও কন্যা নুরজাহানকে নিজ বাড়িতে ডেকে আনে আলমগীর ও তার মা সোজানা বেগম। এ সময় মা-মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ উভয়কে বিবশ্র করে ছেড়ে দেয়ার হুমকী দেন তারা। এক পর্যায়ে মাকে রেখে নিজ বাড়িতে দৌড়ে আসেন নুরজাহান বেগম। মুহুর্তের মধ্যে হৈ-ছৈ পড়ে যায় নুরজাহানকে নিয়ে। মা রাবিয়া বেগম বাড়িতে পৌছে দেখেন তার কলেজ পড়–য়া কন্যা নুরজাহান বেগম বসতঘর সংলগ্ন একটি আম গাছের ডালের সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলে আছে। তার নিস্প্রান দেহটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানয়ীরা। খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানার এসআই সোহেল মাহমুদ ঘটনাস্থলে পৌছলে নুরজাহানের মা রাবিয়া বেগমসহ স্থানীয় লোকজন নুরজাহানের আত্মহত্যার কারন তুলে ধরেন।
এ ঘটনায় দোয়ারাবাজার থানায় একটি ইউডি মামলা(নং-০৯) রুজু করা হয়। এদিকে রাবিয়া বেগম মেয়ের আত্মহত্যার জন্য আলমগীরসহ তার পরিবারকে দায়ী করে থানায় মামলা দায়েরের চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে জানান, তার কলেজ পড়–য়া মেয়ে লজ্জা-অপমান সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। এর জন্য আলমগীর ও তার পরিবারকে দায়ি করছেন তিনি। এ নিয়ে দোয়ারাবাজার থানায় অভিযোগও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যানের কারনে থানা পুলিশ তার অভিযোগটি গ্রহন করেননি। অবশেষে নুরজাহানের চাচা মৃত মকবুল হোসেনের পুত্র আমিন মিয়া বাদী হয়ে ২৮ আগষ্ট আলমগীর হোসেন, তার বোন তাসলিমা বেগম, মা সোজানা বেগম ও পিতা আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আমলগ্রহনকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ১১ অক্টোবর শারপিনপাড়া গ্রামে নুরজাহানের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার শোকাহত পরিবারকে সান্তনা দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন।
গ্রামের মোহাম্মদ রফিক, নূর আলী, জজ মিয়া, জিলু মিয়া, মুক্তার আলী, আব্দুস সোবহানসহ লোকজন জানান, কলেজ পড়–য়া মেয়ের সামনে তার মাকে ও তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনার আধ ঘন্টার মধ্যেই নুরজাহান আত্মহত্যা করে। আলমগীর ও তার পরিবারের কারনেই সে আত্মহননে বাধ্য হয়েছে বলে তারা মনে করেন। নুরজাহানের মা রাবিয়া বেগম আরো জানান, আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন মা-মেয়েকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার অপমান সহ্য না করতে পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি থানায় বিচার না পেয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃজনক। আত্মহত্যার কারন উদঘাটন করে এর সুষ্ট বিচার দাবী করেন তিনি