খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ বিরামপুর থানা পুলিশের মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে গত এক বছরে ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন মাদক ও চোরাচালান পণ্য উদ্ধার করেছে। এসব মাদক উদ্ধার ঘটনায় ২৮৯টি মামলা করা হয়েছে। এতে ৩৫৯ জনকে আসামী করা হয়। এদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক বাদে অধিকাংশ আসামী উদ্ধার অভিযানে আটক হয়।
গত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিরামপুর থানা পুলিশের দেয়া এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মাদক উদ্ধার এবং আসামী গ্রেফতারের ঘটনায় বিরামপুরের সচেতন মহল থানা পুলিশের ভূমিকার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে বিরামপুর থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মনিরুজ্জামান মনির যোগদান করার পরেই মাদক উদ্ধারে পুলিশ এমন সফলতা দেখিয়েছে। থানা পুলিশের সূত্র জানায়, গত এক বছরে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে ৬ হাজার ৮১৫ বোতল ফেনসিডিল, ৩ হাজার ৯৪৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২২১ কেজি গাঁজা, ২ হাজার ২৬৫ পিস ভারতীয় ইনজেকশন, ৮ গ্রাম হেরোইন, হুইসকি ৯ বোতল, হোমিওপ্যাথিকের ৫০ বোতল অ্যালকোহল, ৩০ লিটার চোলাই মদ, খোলা ফেনসিডিল ২ হাজার ৬০০ মিলি লিটার ও জিরা ৩০০ প্যাকেট। এসব ঘটনায় ২৮৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩টি মাদক, ১৪৬টি চোরাচালান আইনে মামলা হয়েছে। থানা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত বছরের অক্টোবর মাসে মাদক ও চোরাচালান সংক্রান্ত আইনে ৪৪টি মামলা হয়েছে। ওই মাসে উদ্ধার হয়েছে ৪১০ বোতল ফেনসিডিল, ৬৬ পিস ইয়াবা, এ্যাম্পোল ১৮০ পিস, গাঁজা ৬০ গ্রাম, হেরোইন ১ গ্রাম ও চোলাই মদ ১০ লিটার। উদ্ধারকৃত ওইসব মাদকের মূল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা। এসব মামলার আসামী করা হয়েছে ৬৩ জনকে। নভেম্বর মাসে ১১৯ বোতল ফেনসিডিল, ৫৯৪ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা, ৮১৯ পিস এ্যাম্পোল। উদ্ধার করা মাদকের মূল্য দেখানো ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এসব ঘটনায় ২২টি মামলায় ২৫ জনকে আসামী করা হয়।
ডিসেম্বরে ৪৪ হাজার ২০০ টাকা মূল্যমানের মাদক উদ্ধার হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে ৪৪ বোতল ফেনসিডিল ও ৭৪ পিস ইয়াবা। ওই মাসে ৪টি মামলায় ৯ জনকে আসামী করা হয়। জানুয়ারী মাসে মাদক ও চোরাচালান উদ্ধারের ঘটনায় ২৩টি মামলা হয়েছে। ওই মাসে ৬৭ বোতল ফেনসিডিল, ৩৬৪ পিস ইয়াবা ও ৭০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়। এসবের মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। আসামী হয়েছে ১৮ জন। ফেব্রুয়ারী মাসে ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা মূল্যমানের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৩৯০ বোতল ফেনসিডিল, ৫৪০ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৩০০ গ্রাম গাঁজা, ১৩২ পিস এ্যাম্পোল, ২০ লিটার চোলাই মদ, ৫০ বোতল হোমিওপ্যাথিকের এ্যালকোহল ও ৬ বোতল হুইসি (মদ)। এসব উদ্ধার ঘটনায় ৩৬টি মামলায় ৫১ জনকে আসামী করা হয়েছে। মার্চ মাসে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০৯ বোতল ফেনসিডিল ও ৯৫১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এসব ঘটনায় ৩২টি মামলায় ৩৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যমানের ৩৮৮ বোতল ফেনসিডিল, ৩৩১ পিস ইয়াবা ৪ গ্রাম হেরোইন, ১ লিটার খোলা ফেনসিডিল ও ২ কেজি গাঁজা। এসব ঘটনায় ১৮টি মামলায় ২২ জনকে আসামী করা হয়। মে মাসে ২২ লাখ ৭৮ হাজার ১০০ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে ৪৮০ বোতল ফেনসিডিল, ২০১ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ১২০ পিস এ্যাম্পোল। মাদক উদ্ধারের এসব ঘটনায় ২২ মামলায় ৩২ জনকে আসামী করা হয়েছে। জুন মাসে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ১ হাজার ৫৭০ বোতল ফেনসিডিল, ৪১৫ পিস ইয়াবা ও ৩ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ১৮টি মামলায় ২০ জনকে আসামী করা হয়। জুলাই মাসে ৪ লাখ ৪ হাজার ২০০ টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৩ বোতল ফেনসিডিল, ১৬৫ পিস ইয়াবা, ৮ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা ও ৩০০ প্যাকেট জিরা রয়েছে। আগস্ট মাসে ৮৭০ বোতল ফেনসিডিল, ২৫৫ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গাঁজা, ৩ গ্রাম হেরোইন, ১ হাজার ১৪ পিস এ্যাম্পোল, ১ লিটার ৬০০ মিলি লিটার ফেনসিডিল। এসবের মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। মামলা হয়েছে ২২টি এবং আসামী করা হয়েছে ২৮ জনকে।
সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে (১৫ তারিখ পর্যন্ত) ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ৬২২ বোতল ফেনসিডিল, ৩ কেজি গাঁজা ও ১০৬ পিস ইয়াবা। ওই মাসে ১২টি মামলায় ১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। থানা পুলিশের সূত্রটি জানায়, মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি মাদক বহনে একাধিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে। বিরামপুর থানা পুলিশের মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার হওয়ায় বিরামপুরের সচেতন মহল থানা পুলিশকে অভিনন্দিত করেছে। বিশেষ করে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান মনির থানায় যোগদান করার পর বিরামপুর উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। তার নেতৃত্বে বিরামপুর থানা পুলিশ যেভাবে কাজ করছে, তাতে ওইসব মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা এখন ওসি মনির আতংকে ভুগছে। এ ব্যাপারে কথা হয় বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামানের সাথে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান পুলিশের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে তিনি বলেন জেলা পুলিশ সুপার আবু সায়েম স্যারের দিক নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য বিরামপুর থানা পুলিশ তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। এছাড়া বিরামপুরবাসীর সহযোগিতার ফলে তিনি প্রতিটি অভিযানে সফলতা পাচ্ছেন। আর এসব কৃতিত্ব বিরামপুরবাসীর। তিনি বলেন, মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।