অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বিয়ের চাপ দেয়ায় তামান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

0
497
অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বিয়ের চাপ দেয়ায় তামান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

খবর৭১ঃ
মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরী তামান্না আক্তার প্রিয়া ৪ মাসের গর্ভবতী ছিলো। বাচ্চা পেঠে আসার পর থেকেই বিয়ের জন্য প্রেমিকা, চাচাতো ভাই আলমগীরকে চাপ দিয়ে আসছিল তামান্না। অব্যাহত চাপের কারনে ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এলাকায় আসে আলমগীর। তামান্নাকে প্রথমে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য অনুরোধ করে আলমগীর। এতে তামান্না আপত্তি জানায়। এরপরই তামান্নাকে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটে সে। কৌশল হিসেবে তামান্নাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় আলমগীর।

ঘটনার দিন বউকে শশুরালয়ে পাটিয়ে রাত অনুমান সাড়ে ৯ টার সময় তামান্নাকে নিয়ে গোপনে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায় একটি বৃক্ষ বাগানে। বাগানটি তামান্নার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। তিন দিক থেকে বাগানটি জঙ্গলে ঘেরা। একদিকে রয়েছে ছড়া। নির্জন সেই বাগানে সে তামান্নার সাথে শারীরিক ভাবে বার কয়েক মিলিত হয়। রাত প্রায় সাড়ে বারোটার সময় আলমগীর তামান্নাকে পেছন দিক থেকে গলায় গামছা পেছিয়ে হত্যা করে লাশের পাশেই রাত কাটায়। এ ফাঁকে স্বর্নের নাক ফুলসহ টাকা কড়ি হাতিয়ে নেয় সে। ভোর রাতে তামান্নার মরদেহ বৃক্ষ বাগানে রেখে আলমগীর আসামপাড়া বাজারে এসে সিএনজি যোগে শশুরবাড়ি মীরপুর চলে যায়। পুলিশের কাছে চাচাতো বোন কিশোরী প্রেমিকা তামান্নাকে হত্যার বর্ননা এভাবেই প্রদান করে ঘাতক আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাতক আলমগীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি প্রদান করেছে। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দুধপাতিল গ্রামের আঃ হান্নানের কিশোরী কন্যা তামান্না আক্তার প্রিয়ার (১৫) মরদেহ মঙ্গলবার ৮ সেপ্টেম্বর রাতে একটি বৃক্ষ বাগানে আবিস্কার করেন এলাকাবাসি। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। এ সময় তামান্না গালে ও চিবুকে কামড়ের দাগ দেখা যায়। পরে তামান্নার মরদেহ মর্গে পাঠায় পুলিশ। রাতে নিহত তামান্নার চাচা আঃ হাসিমসহ তার ৩ ছেলেক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে পরদিন ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে কিশোরী তামান্নার বাবা আঃ হান্নান ভাতিজা আলমগীরকে আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে আলমগীরকে মঙ্গলবার রাতে তার শশুরবাড়ি মীরপুর থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক আলমগীর ১৬১ ধারায় জবান বন্দি দেয়। তামান্না হত্যার লোম হর্ষক বিবরন দেয় ঘাতক আলমগীর। বৃহস্পতিবার আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য কোর্টে প্রেরন করে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ আজহার বলেন, ঘাতক আলমগীরের সাথে তামান্না হত্যার মিশনে আর কেউ জড়িত ছিলো কি না তার জন্য আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। আলমগীরের রিমান্ডও চাইবেন ওই কর্মকর্তা। শেখ আজহার বলেন, এক কিশোরীর মরদেহ বাগানে পড়ে রয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বষয়টি চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হককে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে ওসি শেখ নাজমুল হকসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। এরপরই ঘাতক সনাক্তে মাঠে নামি। এলাকাবাসিরা জানান, দুধপাতিল গ্রামের আঃ হাসিমের বড় পুত্র আলমগীর তার বউ-বাচ্চা নিয়ে প্রায়শই বাড়িতে আসতো। বিবাহিত একজন মানুষ একটি কিশোরী মেয়ের সাথে এমনটা করবে কেউ ভাবতেও পারেন নি। তবে সে এর আগে আরো দুইটি বিয়ে করেছে সবাই স্বীকার করেছেন। সে ঢাকায় একটি পোষাক কারখানায় কাজ করে। নারীর প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে এলাকায়।

ঘাতক সনাক্ত হবার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসি ঘাতক আলমগীরের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here