নড়াইলে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতন করেছে পুলিশ কর্মকর্তা

0
575

হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল থেকেঃ নড়াইলে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘরে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে ৩ দিন ধরে গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালে গিয়েও হুমকি দিচ্ছে নির্যাতনকারী স্বামী। এমনকি তাদের ৩ বছরের শিশু সন্তানকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার ভয়ে অবুঝ শিশুটিকেও মায়ের পাশে রাখা সম্ভব হয়নি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ৪ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান শরীফের মেয়ে ফাতেমা বেগম শিখার সাথে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে সৈয়দ আল মামুনের বিয়ে হয়। আল মামুন খুলনার আদালতে পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। বিয়ের পর বছর খানেক তাদের সুখের জীবন কাটে। এরপর শুরু হয় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ফাতেমা বেগম শিখার ওপর নির্যাতন। যৌতুকের দাবি মেটাতে গৃহবধূর ৫ লাখ টাকার গহনাসহ বাবার বাড়ি গরু পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি টাকা সুদ করে এনেও যৌতুকের টাকা পূরণ করা হয়েছে। তবুও কপালে সুখ মেলেনি গৃহবধূ ফাতেমার। আবারো যৌতুকের দাবি করা হয়েছে। চাকুরিতে বদলি ও পদোন্নতির কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তা আল মামুন সম্প্রতি ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে বলে ফাতেমার পরিবারের অভিযোগ। দাবিকৃত এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে ফাতেমাকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় । গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শনিবার সকালে তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা জানান, যৌতুকের দাবিতে তার স্বামী ৩ দিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়েছে। সারা শরীর রক্তাক্ত করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ৩ বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকেও লাথি মেরেছে। ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ বলেন, প্রথমে তারা মামুনকে ৫ লাখ টাকা দেয়। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পদোন্নতির কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবারো টাকার জন্য বোনের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। এখন কোর্ট ইন্সপেক্টর থেকে থানায় যাওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে। জমি বিক্রি করে টাকা দিতে বলছে। সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার শুক্রবার রাতে তার বোনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। রড দিয়ে অসংখ্য আঘাত করেছে। ফাতেমার মা ফুরজাহান বেগম বলেন, মামুন এতোটা লোভী তা তারা আগে বুঝতে পারেননি। মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়েছে। তবুও টাকার প্রয়োজন শেষ হয়নি। মেয়েকে লাথি ও চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে মেরে জীবনটা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। তিনি এ নির্যাতনের বিচার দাবি করেন। বাবা আব্দুল মান্নান শরীফ বলেন, হাসপাতালেও তার মেয়ের চিকিৎসা ঠিক ভাবে করাতে পারছেন না। জামাই হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন। খালা নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ফাতেমার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে পিটিয়ে আহত করেছে, তা সহজে কাউকে দেখানো যায় না। একজন নারীর ওপর এমন নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। এমনকি তাদের ৩ বছরের শিশু সন্তান আরাফাতকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়ার ভয়ে অবুঝ শিশুটিকেও মায়ের পাশে রাখা যাচ্ছে না। ফাতেমা ও তার শিশু সন্তানের নিরাপত্তায় পুলিশের কোন ভূমিকা দেখা যায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এছাড়া আল মামুনকে হাসপাতাল এবং লোহাগড়া থানা এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ফাতেমার স্বজনেরা। লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শেখ আবুল হাসনাত বলেন, ফাতেমার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহৃ রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। শনিবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও লোহাগড়া থানায় মামলা করতে পারেননি ফাতেমার বাবা, ভাইসহ স্বজনেরা। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে পুলিশ এজাহার রেখে দিলেও রোববার (২৩ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি বলে অভিযোগ করেন ফাতেমার ভাই সাবু শরীফ। এমনকি লোহাগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম ফাতেমার নির্যাতনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। #

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here