খবর৭১ঃ শনিবার নয়াদিল্লিতে ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে পানীয়জল সরবরাহ প্রকল্পে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসিক পানি প্রত্যাহারে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হলেও এর বহু আগে থেকেই কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই ভারত এ নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে। নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবৈধভাবে স্থাপিত ৩৬টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্চালিত লো লিফট পাম্প মেশিনের মাধ্যমে তারা একতরফাভাবে নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে।
বর্ষা মৌসুম ছাড়া সারাবছরই ভারতে এভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে অভিন্ন এ নদীর অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে খাঁ খাঁ করে।
এদিকে, নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের মিরেরশরাইয়ে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্পটি হুমকিরমুখে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিষয়টি যৌথ নদী কমিশনে (জেআরসি) উত্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে পাম্প হাউজগুলো সরিয়ে নিতে বার বার বলা সত্ত্বেও ভারত কর্ণপাত করছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার ভারত সীমান্তবর্তী ভগবানটিলা নামক পাহাড় থেকে উত্পত্তি ফেনী নদীটির দৈর্ঘ্য ১১৬ কিলোমিটার। তন্মধ্যে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ৭০ কিলোমিটার অংশ রয়েছে নদীর। ভগবানটিলা হতে এটি মাটিরাঙ্গা, রামগড়, ফটিকছড়ি সীমানা হয়ে মিরেরশরাইয়ের অলি নগরের আমলিঘাট এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ভারত দক্ষিণ ত্রিপুরার শিলাছড়ি থেকে আমলিঘাট পর্যন্ত নদীর দুই দেশের অভিন্ন অংশের বিভিন্ন স্থানে নো ম্যান্স ল্যান্ডে প্রায় ৩৬টি লো লিফট পাম্প মেশিন বসিয়ে এক তরফাভাবে পানি তুলে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর জলপ্রবাহ থেকে মাত্র ৩০-৫০ গজ দূরে টেউটিন দিয়ে তারা স্থায়ীভাবে পাম্পহাউজ নির্মাণ করে সেখানে বিদ্যুত্চালিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোটর বসিয়ে নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে। মোটর চালানোর জন্য প্রতিটি পাম্পহাউজে বিদ্যুত্ লাইন স্থাপন করে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। মানুষের নজরে না আসার জন্য অধিকাংশ পাম্পহাউজ মাটির নিচে পাকা দেওয়াল তৈরি করে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পাম্পহাউজ থেকে নদীর জলপ্রবাহ পর্যন্ত খনন করে মাটির নিচ দিয়ে ৬-৮ ইঞ্চি সিআই পাইপ বসানো হয়। ১৯৮২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে এ পাম্পহাউজগুলো স্থাপন করা হয় বলে এলাকাবাসী জানায়। এসব পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে সাব্রুম মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে সেচ দেয় ভারত।
আষাঢ় শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষার সময় ছাড়া বাকি ১০ মাসই ভারত পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি তুলে নেয়। ৩৬টি উচ্চক্ষমতার পাম্প মেশিনের মাধ্যমে অবিরাম পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি প্রায় শুকিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যে কোনো স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ অবৈধ।’
ভারত এ আইন লঙ্ঘন করে ফেনী নদীর পাড়ে ৩৬টি পাম্পহাউজ স্থাপন করেছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের পানীয়জল প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৮২ কিউসিক পানি নিতে বাংলাদেশের কাছে অনুরোধ জানায়। মানবিক দিক বিবেচনা করে গত শনিবার দিল্লিতে এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ।
এদিকে, বিপন্ন ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসিক পানি প্রত্যাহারে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের ব্যাপারে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মীরসরাইস্থ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডা. জামশেদ আলম। তিনি বলেন, ফেনী নদী বাংলাদেশেরই নিজস্ব নদী। ভারত অন্যায়ভাবে এ নদীতে ভাগ বসিয়েছে।