খবর৭১ঃ
মধ্য আশ্বিনে শারদীয় আবেশ লেগে আছে প্রকৃতিজুড়ে। সেই নীলাকাশ সাদা মেঘের ভেলা। কাশফুলের সমারোহ। শিউলি ঝরা প্রভাত। ঘাসের ওপরে শিশির বিন্দু। রাত গভীরে শীত শীত আমেজ। তার মধ্যে ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনি-শঙ্খের আওয়াজে পূজামণ্ডপগুলো মুখরিত। হিন্দুদের উত্সবের জোয়ার বইছে চারদিকে। আনন্দ-হুল্লোড়। হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত-দর্শনার্থী ঢাকেশ্বরী মন্দির, জগন্নাথ হল, শাঁখারিবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, বনানীসহ বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাকে দর্শন ও প্রার্থনা-তর্পণে যাচ্ছেন। মুখরিত হয়ে উঠছে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ। আজ মহাষ্টমীর সকালে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এক বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ-চিন্তা করে সনাতনধর্মীরা তাকে ‘দেবী’জ্ঞানে পূজা করবে। কুমারী পূজা কেন করে? শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা আছে- ‘সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ।’
প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে মেয়েটির নাম এবং পরিচয় পূজা সূচনার পূর্বাব্দী প্রকাশ করা হয় না। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। আজ সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন ও নানান অলংকার-প্রসাধন উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে কুমারীকে। এদিকে দুর্গোত্সবে গতকাল কলাবউ স্নান, নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাশেষে যথারীতি অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন ছিল। বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিতরা জানিয়েছেন, দুর্গাকে বিশেষ রীতি অনুসারে দর্পণে স্নান করানো হয়। দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে তা স্নান করানোর পর বস্ত্র ও নানা উপাচারে মায়ের পূজা দেওয়া হয়।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবারের মতো এ বছরও আমরা আজ সকালে কুমারী পূজার আয়োজন করেছি। পাঁচ থেকে ছয় বছরের বালিকাকে সাজানো হবে কুমারী মাতৃকারূপে। এ উপলক্ষ্যে রামকৃষ্ণ মিশন ও এর আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুমারী পূজা সম্পর্কে হিন্দুদের বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা হয়েছে, রাম-রাবণের যুদ্ধে রামকে জেতাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর একযোগে নেমে পড়েছেন। তখন শরত্কাল, দক্ষিণায়ন। দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই ব্রহ্মা দেবীকে স্মরণ করলেন। দেবী কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্ববৃক্ষমূলে (বেল গাছ) দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন স্তবে তাকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকামূর্তি ত্যাগ করে চণ্ডিকামূর্তি ধারণ করলেন। তন্ত্রসার মতে, এক থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত। তাদের অবশ্যই ঋতুমতি হওয়া চলবে না।