মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী এবং আমার উপলব্ধি

0
1311
মধ্য পঞ্চাশে শেখ রাসেল ও বাঙালির অধিকার
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।বিশ্ববিদ্যালয়।

খবর৭১ঃ জাতিসংঘ থেকে ফিরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাবেন মিডিয়ার কারণে তা আর দশজনের মত জানা ছিল আমারও। শুধু জানা ছিল না যে তার সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ জুটবে।জানলাম সহসাই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যাবার সুযোগ আমার হয়েছিল। কিন্তু এবারের ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। চিঠি বলছে এই মনোনয়ন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। তাও আবার বিশিষ্ট নাগরিকদের একজন হিসেবে। গর্বে বুক এই ফাটে তো সেই ফাটে অবস্থা।

তিন তারিখে ভোর-ভোরই হাজির আমি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানের নতুনতম জাহাজগুলোর অন্যতম ‘রাজহংস’ ড্রিমলাইনারে আমার ড্রিম যাত্রা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যারা নিত্য সফরসঙ্গী তাদের কাছে অনেক কিছুই চোখ সওয়া, আমার কাছে না। দিল্লীর পালাম বিমান ঘাটিতে পৌঁছানোর আগেই বিমানে থাকতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল কর্তারা আমাদের পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করে নিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একই ভিভিআইপি বিমানে চড়ে নয়াদিল্লীর বিমানঘাঁটিতে অবতরণের ধাক্কাটা ঠিকমত হজম করতে না করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বহরের গাড়িতে চড়ে বিমানঘাঁটি থেকে দিল্লীর অভিজাত তাজ মহল হোটেলের দিকে যাত্রা শুরু। সামনে-পিছনে প্রোটকলের গাড়ি।

সবার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দুপাশে বন্ধ রাস্তার মোড়ে-মোড়ে সারি-সারি দাঁড়ানো পথ চলতি গাড়ির বহর। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাকে সুগম করতে দিল্লীর ব্যস্ত ট্রাফিকের এ যেন সশ্রদ্ধ অভিবাদন। ছুটছে গাড়ির বহর উর্ধ্বশ্বাসে। ছুটছি আমি আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে দু’চোখের অশ্রুধারা। কখনও বাঁধভাঙ্গা আনন্দে তো কখনও বুকফাটা গর্বে।

হোটেলে পৌঁছতেই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছুটবেন India Economic Forum-এর বৈঠকে যোগ দিতে। সেই কোন ভোরে উঠে বিমানযাত্রা, তারপরও বিশ্রাম নেয়ার দরকার নেই এতটুকু। কে বলবে মাত্র একদিন আগেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়া ছাড়াও আট দিনে তেইশটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন এই মহিয়সী নারী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দম না ফেলে ছুটছেন আমরা তখন ব্যস্ত এটা-সেটা আনুষ্ঠানিকতা যোগ দেয়া আর নেটওয়ার্কিং-এ। বিদেশি থিংকট্যাঙ্ক কিংবা সাংবাদিক যার সাথেই কথা হয় সবকিছু ছাপিয়ে এখন শেখ হাসিনা। India Economic Forum- এ তার উদ্ভোধনী বক্তৃতা নাকি সমাপণীতে তার বক্তব্য। তাবৎ বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল জায়ান্টরা এর কোনটা বেশি গিলেছেন এ নিয়ে যেমন আলোচনার ঝড় তেমনি যুক্তির পর তর্ক আর তর্কের শেষে যুক্তি জুড়ে দেয়া চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কত তাড়াতাড়ি দুই ডিজিট ছুঁবে এ নিয়ে আলোচনার।

শেখ হাসিনাতো এক, দুই নম্বরে কে? ইন্দিরা গান্ধী না এঙ্গেলা মার্কেল। পুড়ে ছাই হচ্ছে সিগারেটের পর সিগারেট। শেষ হচ্ছে কাপের পর কাপ চা আর কফি। কিন্তু উত্তরতো মিলছে না। এমন শেখ হাসিনাময় একটি পরিবেশে বাংলাদেশের মাননীয় হাইকমিশনারের বাসা, বাংলাদেশ ভবনে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ডিনারে আমরা যখন উপস্থিত; আমাদের জন্য আরো বড় চমক এখনও বাকি। দিল্লীর সাম্প্রতিক স্মৃতিতে নেই এমনি বৃষ্টি। বলা নেই, কওয়া নেই আবহাওয়া পূর্বাভাসও। সহসা প্রচণ্ড বৃষ্টিতে পথ-ঘাট ডুবে একাকার। ডুবে গেছে বাংলাদেশ ভবনের সামনের লনও। ওখানেই গার্ডেন ডিনারের সব আয়োজন। শুধু কি তাই, বাংলাদেশ ভবনে ঢুকতে যেয়েইতো কাকভেজা একেকজন। অথচ এরই মাঝে বৃষ্টিতে গোসল করে রুমালে মাথা মুছতে মুছতে পৌঁছেছেন একের পর এক রাষ্ট্রদূত আর ডিগনিটারিজ।

বৃষ্টি আর আদর্শিক বিভেদ এ সবই শেখ হাসিনার সামনে দুধভাত। বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খায় শুনেছি শুধু কিন্তু শেখ হাসিনার পাশে বসে একই টেবিলে খেতে দেখেছি সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক আর লোকসভার বিরোধী দলের নেতাকে। তবে ছক্কাটা তিনি হাকিয়েছেন শ্লগ ওভারে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলতে যেয়ে। এমনকি Line of Credit খোলার পরও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ভারতীয় সিদ্ধান্তটি তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিন লাইনের একটি বক্তৃতায়। সুন্দর হিন্দিতে বলেছেন, তিনি তার পাচককে বলে দিচ্ছেন রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিতে। হিন্দিতে কথাগুলো বলে যেমন ছুঁয়ে গেছেন গোটা উত্তর ভারতের হৃদয় তেমনি অসম্ভব রসবোধের মাধ্যমে সম্ভব করেছেন অসম্ভবকেও। ভারত সরকারের উপস্থিত মন্ত্রীরা কথা দিয়েছেন এলসি করা পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেবেন বাংলাদেশে।

যে বিষয়ে সমাধান পাওয়া হয়তো যেতো না দীর্ঘ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনাতেও, শেখ হাসিনার এক ‘পেঁয়াজ কাণ্ডে’ মুহূর্তেই কুপোকাত ভারতীয় মিডিয়া আর প্রশাসন। আর সবচাইতে বড় কথা এই যে এই ‘পেঁয়াজ কাণ্ডে’ আমাদের এখন সবার চোখ, এভাবেই অর্জিত হতে পারে অমীমাংসিত যত ইস্যু। দৃঢ়তর হতে পারে ইন্দো-বাংলা পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বন্ধন। ঘনিষ্টতম আর বন্ধুর চেয়েও বেশি ঘনিষ্টতর এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের আজকের যে সম্পর্ক তাও পেতে পারে একটি স্থায়ী অবয়ব।

পেঁয়াজের ঝাঁজের চেয়েও ধারালো যার প্রজ্ঞা, যিনি আজ বাংলাদেশের মানচিত্রের এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটারের সীমানা পেরিয়ে আজ বিশ্ব মানবতার নেত্রী, সেই শেখ হাসিনার হাত ধরেই যে আসন্ন বাংলাদেশের আদর্শিক আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এ নিয়ে স্বস্তি পেতে আমার কোন অস্বস্তি নেই। তাই আগামীকাল যখন আবারো ভিভিআইপি বিমানে চড়বো ফিরতি পথে, তখন চিৎকার করে গাইবো, ‘হারে রে রে রে রে, আমায় রাখবে ধরে কেরে?’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here