খবর৭১ঃ
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত ১২ ঘন্টায় এ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ৩ সেন্টিমিটার। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙেছে। বুধবার পানি পরিমাপ করার পর এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সকালে কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের ৩০ মিটার ধ্বসে গেছে। এতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৬ বছর পর বিপদসীমা অতিক্রম করে পদ্মার পানি বিপদসীমার পয়েন্ট ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা হলো ১৪ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার। সেখানে বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পানির মাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। সোমবার ছিল ১৪ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। গড়ে প্রতি দিন ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। সর্বশেষ পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যহতভাবে পানি বাড়ছে। বুধবার গড়াইয়ের পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১২ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার। গড়াই নদীর বিপদসীমা হচ্ছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ২৮ সেন্টিমিটার দূরে।
এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে দৌলতপুরের আরও নতুন চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩৯ গ্রামের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। পানি ঢুকে পড়েছে ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিপুর, বাহাদুরপুর ও বাহিরচর ইউনিয়নের। পাশাপাশি মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া ইউনিয়ন ও কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়ায় গড়াই নদীতে পানি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
পদ্মার পানি ১৬ বছর পর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে
জিকে ঘাট ছাড়াও বড় বাজার এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে বেশ কিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে কুষ্টিয়া রক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কুন্ডু জানান, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব আর উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে গত দুই দিন পদ্মায় অস্বাভাবিকহারে পানি বেড়েই চলেছে। বুধবার বিকাল ৪টায় কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের পানির সমতল ছিল ১৪.৩১। যা বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদীতেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তা চলমান থাকলে চরম ক্ষতির আশংকা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পারিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুুত রয়েছে। আরও ত্রাণ প্রয়োজন হলে আসবে।’
দৌলতপুরে বন্যার চরম অবনতি হয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের কোন গ্রামে বা বাড়ি আঙিনায় বন্যার পানি যেতে আর বাকি নেই। দুই ইউনিয়ন এখন পুরো পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। যেদিকে তাকানো যায় শুধু পানি আর পানি। কৃষকের স্বপ্নের অর্থকরী ফসল মাসকলাই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর এবার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলেছে।
পানি ও খাবারে সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্যের তীব্র সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নে সরকারিভাবে ঢাকা থেকে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দুপুরে কুষ্টিয়া-১ আসনের (দৌলতপুর) সাংসদ আ ক ম সরওয়ার জাহান ও জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেন।