খবর৭১ঃ বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত অনলাইনে জুয়ার হোতা সেলিম প্রধানকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও মাদকের আরও দুটি মামলা হচ্ছে থানায়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ‘ক্যাসিনো’ সেলিম জানান, তার অনলাইন ক্যাসিনো থেকে আয়ের অবৈধ টাকা তিন ব্যাংকে জমা রাখতেন। পরে সে সব টাকা হুণ্ডি বা সঙ্গে করে বিদেশে পাচার করতেন। লন্ডনেও তিনি সে সব টাকা পাচার করতেন বলে তথ্য পেয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অভিযান শেষে এ সব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে ক্যাসিনো খেলতে হলে গ্রাহকের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয়। সে সব টাকা তিনটি গেটওয়েতে জমা হতো। খেলায় জিতলে টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত যেত, আর হারলে টাকাগুলো গেটওয়েতে থেকে যেত। সেলিমের সহকারী মো. আক্তারুজ্জামান প্রতি সপ্তাহে সেই গেটওয়ের টাকা উত্তোলন করে সেলিম, যমুনা ও কমার্শিয়াল- এই তিন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। এরপর সে সব টাকা হুণ্ডির মাধ্যমে অথবা সঙ্গে করে বিদেশে পাচার করা হতো। এ ছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, বিভিন্নভাবে লন্ডনেও টাকা পাঠিয়েছেন সেলিম।
কী পরিমাণ টাকা লন্ডনে পাচার হয়েছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, একটা গেটওয়ে থেকে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। এমন আরও কিছু গেটওয়ে রয়েছে, সেগুলো আমরা যাচাই-বাচাই করে দেখছি।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে ক্যাসিনো সেলিমকে নামিয়ে আনে র্যাব-১ এর একটি দল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে নিয়ে গুলশান-২ এ তার বাসা কাম অফিস ‘মমতাজ ভিশনে’ অভিযানে যায় র্যাব। প্রথমে সেলিমকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থলে যায় র্যাবের তিনটি গাড়ি। পরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০টিতে। টানা ১৬ ঘণ্টা সেখানে অভিযান চলে। অভিযানের সময় সেলিম প্রধান ওই বাসার ভেতরে র্যাবের সঙ্গে ছিলেন। পরে সোমবার রাতে গুলশানের বাসায় অভিযানে যায় র্যাব।
সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।
সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি। এ ছাড়া এর আগে গ্রেফতার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও।
সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন।