জিপি-রবির কাছে পাওনা জট খুলছে না সহজেই

0
560
জিপি-রবিতে প্রশাসক বসানোর পদক্ষেপ

খবর৭১ঃ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার কাছ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা আদায়ের জট সহজেই খুলছে না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে আলোচনার কথা বলেছিলেন, তার এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

বিটিআরসির পাওনাকে কেন্দ্র করে দেওয়া মামলা দুই অপারেটর প্রত্যাহার করেনি। আবার বিটিআরসিও দুই অপারেটরের ছাড়পত্র দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি। লাইসেন্স বাতিল কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে দেওয়া চিঠিও প্রত্যাহার করেনি। সব মিলিয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, এমন নিশ্চয়তাও মিলছে না।

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফোলি উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানিয়েছে, এতে নিরীক্ষা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি যে তারা মামলার পথে যাবে না। আমরাও মামলার পথে যাব না। তারা একটি হিসাব দিয়েছে, ১ টাকায় তারা সরকারকে ৫৩ পয়সা দেয়। যত ব্যবসা, তত লাভ। আমরা সেই সুযোগ নেব না কেন। তাদের আটকে দিলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।’

অবশ্য বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, অর্থমন্ত্রীর নেওয়া সমঝোতার উদ্যোগে বাকিরা তেমন উৎসাহিত নয়। খুশি কেবল মোবাইল অপারেটররা।

গ্রামীণফোন ও রবির কাছে বিটিআরসি পাওনা দাবি করছে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও রবির কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এই টাকা আদায়ে ৫ সেপ্টেম্বর দুই অপারেটরকে লাইসেন্স (টু–জি ও থ্রি–জি) বাতিল কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। জবাবের সময় ৩০ দিন।

এরই মধ্যে দৃশ্যপটে হাজির হন অর্থমন্ত্রী। ১৮ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে তিনি বলেন, বিষয়টির সুরাহা হবে আলোচনার মাধ্যমে। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরদিন অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর গ্রামীণফোন আ হ ম মুস্তফা কামালকে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, গ্রামীণফোন চায় পাওনা নিয়ে বিরোধটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে, স্বচ্ছতার সঙ্গে ও দ্রুত সুরাহা হোক। তারা সালিস আইনের অধীনে নিষ্পত্তি চায়।

চিঠিতে গ্রামীণফোন পরবর্তী আলাপ-আলোচনার আগে বিটিআরসি যাতে টাকা আদায়ের সব কার্যক্রম স্থগিত করে, সেটা চেয়েছে। তারা পাওনা নিয়ে বিরোধসংক্রান্ত মামলা তুলে নেবে বলে উল্লেখ করেছে।

এ সম্পর্কে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলেছে, লাইসেন্স–সংক্রান্ত কারণ দর্শানো নোটিশ ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে গ্রামীণফোন বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি। যদিও ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, একটি গঠনমূলক আলোচনা ও অপারেটরদের ব্যবসায়িক পরিবেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আগের নিষেধাজ্ঞা আর বহাল থাকবে না। একই বিষয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, তাঁরা বিটিআরসির পরবর্তী পদক্ষেপ ও নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন।

লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে হবে ৪ অক্টোবরের মধ্যে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে গতকালের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তিনি বৈঠকে ছিলেন। তবে সিদ্ধান্ত কী সেটা জানাবেন অর্থমন্ত্রী। যদিও সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি।

এ বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here