খবর৭১ঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, জুয়ার (ক্যাসিনো) সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে যাদের নাম আসবে, তাদের আয়কর নথি খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে এনবিআরের যোগাযোগ আছে। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতদের তথ্য আদানপ্রদান করা হচ্ছে। কর ফাঁকি উদ্ঘাটনের পাশাপাশি এদের বিদেশে সম্পদ আছে কি না, টাকা পাচার করেছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ’র সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা যোগাযোগ করছে। সেগুনবাগিচায় নিজ কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান দাবি করেন, কাস্টমস অফিসাররা জুয়া নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি অবহিতই না। কারণ কাস্টমস পণ্য খালাসের সময় আগে দেখে আমদানি নীতিতে কী আছে। সেখানে আমদানি নিষিদ্ধ যেসব আইটেম আছেÑ যেমন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তা নিষিদ্ধ করা আছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ক্যাসিনোর কথা বলা নেই। ক্যাসিনো যে দেশে আসবে, এটাই তো কল্পনার বাইরে ছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আইনের মাধ্যমে মদ-জুয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দেশে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক হোটেল ও ক্লাবে বৈধ লাইসেন্সের বিনিময়ে মদ-বিয়ার আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ জাতীয় পণ্যের আমদানিতে উচ্চ শুল্ক-কর আরোপিত আছে। কিন্তু জুয়ার ব্যাপারটি বৈধ নয়। বিভিন্ন ক্লাবের নামে ক্যাসিনো চালানোর বিষয়টি সত্যি কথা বলতে জানতামই না। এগুলোয় কীভাবে যন্ত্রপাতি (জুয়া খেলার সামগ্রী) এসেছে, সেটা খতিয়ে দেখতে শুল্ক গোয়েন্দাকে বলা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কারা এ ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে, কীভাবে এনেছে, তা যাচাই করতে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্যাসিনোর নামে কোনো যন্ত্রপাতি আসেনি। এগুলো খেলনা, খেলার সরঞ্জাম হিসেবে এসেছে। আবার কিছু জিনিস (কাঠের চাকতি) বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। হয়তো মেশিনটি বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। অনুসন্ধান করা হচ্ছে, কীভাবে এগুলো দেশে এসেছে। এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অবহেলাও থাকতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক দুইজনের কর ফাঁকি অনুসন্ধানের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অপরাধের সন্দেহে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের কারও কারও কাছ থেকে অনেক টাকা ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়েছে। এসবের অর্থের উৎস খোঁজার জন্য তাদের, তাদের পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর ফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করে আয়কর ফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। অসঙ্গতি থাকলে আইন অনুযায়ী কর ও জরিমানা আদায় করা হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কেউ যাতে টাকা উঠিয়ে নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য ব্যাংক হিসাব জব্দ (লেনদেন বন্ধ) করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আটক দুইজনের (জিকে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভুইয়া) অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তারা বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন, তাদেরও ব্যাংক হিসাব তলব করেছি। এখানে দুইজন সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন, যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তবে জব্দ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আরও সন্দেহজনক ব্যক্তির তালিকা করা হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ যারা অবৈধ উপায়ে কালো টাকা আয় করেন, তারা সব টাকা ব্যাংকে রাখেন না। অন্য উপায়ে টাকা সংরক্ষণ করেন। এনবিআর শুধু ব্যাংকিং সিস্টেমে টাকার অনুসন্ধান করছে। সেখানে যা পাওয়া যাবে, তার ভিত্তিতেই ফলাফল হবে।
সব ধরনের খেলাধুলার ক্লাবকে নজরদারিতে আনা হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশে যেসব স্বীকৃত ক্লাব আছে, তাদেরকে হিসাবের আওতায় এনেছি। যেমন- গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। এগুলো সব ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতায় এনেছি। কিন্তু পাড়া-মহল্লার ক্লাব স্বীকৃত নয়। তারপরও নতুন করে এগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে। স্পোটর্স ক্লাবগুলোকে ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তাদের হিসাব-নিকাশ সবই চাওয়া হবে।