খবর৭১ঃ
মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে মেয়র মো. ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর। অভিযোগকারী কাউন্সিলররা হলেন- জালাল উদ্দিন মোহন, মাসুদউজ্জামান মাসুক, খায়রুল আলম, আব্দুল জলিল, শিউলী বেগম, মো. নওয়ার আলী, মোহাম্মদ তাহির মিয়া খান।
৯ই সেপ্টেম্বর তাদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন- শায়েস্তাগঞ্জ পৌরমেয়র ছালেক মিয়া ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ইং অর্থবছরের এডিপি রবাদ্দ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা একত্রিত করে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার করেন এবং এর মধ্য হতে কিছু ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবে কোনো কাজ না করেই সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। যা আইন ও নিয়মের পরিপন্থি।চলমান প্রজেক্ট এমজিএসপি-১, ডাব্লিউ ৪ প্রকল্পের (প্রায় ৩৭ কোটি টাকা) আওতায় পরিচালিত পুরাতন প্রায় ১ হাজার ফুট ড্রেনেজের উপরিকাঠামো সাধারণ আস্তর দিয়ে দায়সারাভাবে নির্মাণ করে ঠিকাদার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। এমনকি এমজিএসপির চূড়ান্ত ডিজাইন মেয়র আর্থিক সুবিধা অর্জনের জন্য ন্যক্কারজনকভাবে পরিবর্তন ও নিম্নমানের কাজ সম্পাদন করছেন। ওই প্রকল্পের মেইনটেনেন্স বরাদ্দের বিপুল অঙ্কের টাকা নামমাত্র কাজ করে আত্মসাৎ করেন।
এ ছাড়াও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রোড রোলার, ড্রাম ট্রাক, গার্ভেজ ট্রাক, পানি সরবরাহ ট্রাকের নিয়মিত ভাড়া হতে অর্জিত অর্থ প্রায় কোটি টাকা পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করেন। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরমেয়র ছালেক মিয়া টমটমের (অটোবাইক) বার্ষিক নাম্বার প্লেট বরাদ্দের নামে রাস্তায় চলাচলরত যেকোনো টমটমকে যেকোনো অজুহাতে আটক করে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বছরে ১৫ লাখ টাকা পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। পৌরমেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স মন মতো বাড়িয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে অর্জিত টাকা পৌরসভার একাউন্টে জমা না দিয়ে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেন। আইনের তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে নকশা আনুমোদনের নামে বিপুল পরিমাণের অর্জিত অর্থ পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের অধীনে অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে (হাইকোর্টে রিট মোকদ্দমাধীন) পৌর মার্কেট নামীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক দোকান ঘর নির্মাণ করে তা থেকে দোকান ঘর বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি-সেলামি বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা ও প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা পৌরসভার নামে আদায় করে কোষাগারে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। ইহা সর্বজনবিদিত এবং ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত সংবাদ দেশের প্রতিটি ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।মো. ছালেক মিয়া পৌরমেয়র হওয়ার পর হতে নিজে ধরাকে সরা জ্ঞান করে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। দাপ্তরিক প্রয়োজনে কোনো নাগরিক পৌরপরিষদে গেলে মেয়র ছালেক মিয়া তাদের সঙ্গে মারাত্মক খারাপ আচরণ করেন।
যা পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার শামিল। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করার কারণে কোনো নামিদামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় কাজ নিতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফলে ছালেক মিয়া নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের ভাগিয়ে নিয়ে টেন্ডারকৃত কাজ দায়সারাভাবে সম্পন্ন করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন পুরাতন রাস্তা সংস্কারের নামে তিনি অবৈধভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে অপ্রয়োজনীয় ৩৮ জন জনবল নিয়োগ করে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। ইহাতে পৌরসভা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ব্যক্ত থাকা আবশ্যক যে, ছালেক মিয়া পৈতৃকভাবে প্রাপ্ত মাত্র ২ শতাংশ ভূমির মালিক। তিনি মেয়র হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের মাথায় নামে বেনামে স্থাবর অস্থাবর প্রায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এতে পৌরসভার ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিতেও পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মেয়র ছালেক মিয়ার উপরোক্ত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গেলে কাউন্সিলরদের অপমান করেন। কোনো কোনো সময় অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করার মাধ্যমে অফিস থেকে বের করে দেন।
মেয়র ছালেক মিয়া শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে আমরা কাউন্সিলরগণ প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি কঠোর কণ্ঠে বলেন, ‘পৌরসভার মালিক আমি, যা ইচ্ছা তাই করব। ইচ্ছা হলে অফিসে আসো নয়তোবা পদত্যাগ কর।’ উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরমেয়র মো. ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কাউন্সিলরগণ দুদক চেয়ারম্যানের বরাবরে আবেদন করেন। সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, এমপি মো. জাহির আহমেদ, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও এমজিএসপি এর প্রকল্প পরিচালককে প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মেয়র মো. ছালেক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।