মোঃ রাসেল মিয়া, মুরাদনগর( কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
পরিশ্রম ছাড়া সফল হওয়া যায় না, আর পরিশ্রম করে অসাধ্যকেও সাধন করা যায়। নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে নিজের স্বপ্নকে জয় করেছেন পারুল আক্তার নামে এক নারী। নারী সমাজের বোঝা নয়। কল্যাণের অগ্রযাত্রা ও আত্মনির্ভরতায় সৃষ্টি ও মমত্বের এক অপূর্ব সংমিশ্রন নারী। নারী অবজ্ঞা, উপেক্ষা বা ফেলে দেওয়ার নয়। দেশ জাতি ও সমাজ নির্মাণে এখন পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে নারীরাও এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আত্ম নির্ভরশীল শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ ও অসাধারণ জীবনের গল্প রচনা করেছেন যে নারী, তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের কাউছার আলমের স্ত্রী পারুল আক্তার(৩৫)।
২০০৪ সালে অভাবের সংসারে মাত্র বিশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ছোট পরিসরে একটি নাসার্রী গড়ে তুলেন তিনি। নার্সারী কাজ করে যা আয় হতো তা দিয়েই কোনরকম সংসার চলত। নিজের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষকে আত্ম নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে তার এই নার্সারীর নাম দেন সবুজ নার্সারী। প্রতিদিন তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসছে এলাকার যুবক-যুবতিরা। তার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই। বাড়ছে তার নার্সারীর চারা গাছের চাহিদা। পারুল আক্তার শুধু নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করেই ক্ষান্ত নন, স্বপ্ন দেখেন অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। বাখরনগর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার মেয়ে পারুল আক্তার।
২০ বছর আগে একই গ্রামের আব্দুল বারেক মিয়ার ছেলে কাউসারের সাথে বিয়ে হয় পারুলে আক্তারের। বিয়ের পর থেকে স্বামী যা রোজগার করত তা দিয়ে দু-ছেলেসহ তার চার জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো প। তিন সন্তানসহ পাচঁ জনের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারত না। এমকি না খেয়ে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। ২০০৪ সালে স্থানীয় এক এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। নিজেকে আত্ম নির্ভরশীল করতে তার বুদ্ধি, কর্মদক্ষতা ও মেধা দিয়ে সুদক্ষ হাতে শুরু হয় নার্সারী ব্যবসা। এই নাসার্রী কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করে পারুল। এতে করেই আস্তে আস্তে তার অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। বর্তমানে তিন বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তুলেছেন তার নার্সারী।
এখানে কি পাল, চেড়ী, মিরাক্কেল, এভিলিও, পাসীমন, মেঙ্গু সিট্নি, অলিফ, কীউই, আইনক্রীম ড্রিংস অরেঞ্জ লংগান, এডোকাডের মতো দেশি-বিদেশি শতাধীক জাতের চারা গাছ রয়েছে। এই নাসার্রীতে দৈনিক ১৫ জন লোক কাজ করে। এখন তার মাসিক আয় গড়ে ৭০/৮০ হাজার টাকা। সংসারে আর নেই অভাব অনটন। এখন স্বামী সংসার নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করেছে পারুল আক্তার। তবে স্থানীয় এনজিও সংস্থা অনেকটাই সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে তার জীবনে। সে সময় দৃঢ় মনোবল ও সাহসই ছিল তার বড় সঙ্গী। পাশাপাশি এলাকার অনেক গরীব এবং দুঃস্থ লোকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার কাছে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী-পুরুষ। পারুল আক্তার বলেন, “নারী হিসেবে ব্যবসা করার বিষয়টি সমাজ খুব সহজ ভাবে মেনে নেয় না। তাও আবার গ্রামের মত জায়গায়। স্বামী ছাড়া পরিবার থেকে সে সময় কেউ পাশে দাঁড়ায়নি আমার। স্বামীর তেমন কোন সম্পদ না থাকায় সে সময় অর্থই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নাসার্রী কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করি। আমি অনেক নারী এবং পুরুষকে কাজ শিখিয়েছি। আজ অনেকে স্বাবলম্বি হয়েছেন তারাও । তবে এ ব্যবসাকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। বাকি জীবনটাও সংগ্রাম করে কাটিয়ে দেব অসহায়দের পাশে থেকে। সরকার আমার মতো এক নারীকে দেশ সেরা পদক দিয়ে নারী সমাজের সন্মান উজ্জল করেছেন।”
স্বামী আবু কাউছার বলেন, ‘আমি স্বামী হিসেবে সংসারের দায়ীত্ব নিতে পারিনি। আমার স্ত্রী পারুল নিজের কর্মদক্ষতায় আত্ম নির্ভরশীল নারী হিসেবে দেশ ও এলাকার মান উজ্বল করেছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। স্থাণীয় সাংসদ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন (এফসিএ) বলেন, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে নারী উন্নয়নের বিকল্প নেই। বর্তমান যুগে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মুরাদনগরের অসহায় নারিদের উন্নয়নের জন্য একটি নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন করেছি। এ নারী উন্নয়ন ফোরামের সকল নারীদের স্বাভলম্বি করে তোলার জন্য সেলাই মিশিন, বিউটি পার্লার সামগ্রী ও আর্থিক সহয়তা প্রদান করা হচ্ছে। পারুল আক্তার দেশ সেরা নারী খেতাবে ভূষিত হয়ে নারী সমাজকে জাগ্রতসহ মুরাদনগর উপজেলার মান উজ্জল করেছেন।