খবর৭১ঃ তেল শোধনাগারে হামলায় ব্যবহৃত ১৮টি ড্রোন ও ৭টি ক্রুজ মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শন করে সৌদি আরব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে এগুলো প্রমাণ করে ওই হামলায় জড়িত ছিলো ইরান। তারা বলছে আঠারোটি ড্রোন আর সাতটি ক্রুজ মিসাইল একটি জায়গা থেকেই ছোঁড়া হয়েছিলো কিন্তু এগুলো ইয়েমেন থেকে ছোড়া হয়নি বলেই দাবি তাদের।
ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা অবশ্য আগেই এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে শনিবারের ওই হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।
একই সঙ্গে দেশটি যে কোনো হামলার স্বীকার হলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রও দাবি করেছিলো যে ওই হামলার পেছনে ইরানই ছিলো।
বুধবার সৌদি আরবে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একে ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন এ ঘটনার জবাব দেয়ার জন্য ‘অনেক বিকল্প’ ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। চূড়ান্ত একটি বিকল্প আছে এবং এছাড়া আরও বিকল্পও আছে। এবং আমরা দেখবো। আমরা শক্তিশালী অবস্থানে আছি।
কি প্রমাণ পেলো সৌদি আরব
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে ওই হামলার প্রমাণাদি উপস্থাপন করে সৌদি আরব যাতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়েছিলো।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালকি বলেছেন যারা যা উপস্থাপন করেছেন সেটিই প্রমাণ করে হামলা এসেছিলো উত্তর দিক থেকে এবং সেটি ‘প্রশ্নাতীতভাবেই ইরান দ্বারা পরিচালিত’।
কর্নেল মালকি অবশ্য বলেন, তারপরেও তারা যেখান থেকে হামলা হয়েছে সেই পয়েন্টটি চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। যে সব ধ্বংসাবশেষ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে তারমধ্যে ইরানের ইউএভি বা চালকবিহীন উড়ন্ত বাহনের ‘ডেল্টা উইং’ ছিলো বলেও দাবি করা হয়।
“কম্পিউটারে ইউএভি ডাটা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে এটি ইরানের”, বলছেন মিস্টার মালকি। তিনি বলেন ১৮টি চালকহীন বাহন দিয়ে হামলা হয় আবকাইক তেল শোধনাগারে এবং সাতটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে দুটি জায়গায়। এর মধ্যে চারটি খুরাইজ তেলক্ষেত্র ও তিনটি পড়ে আবকাইকে।
কর্নেল মালকি বলেন যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে সেগুলো এসেছিলো উত্তর অভিমুখে। তিনি ম্যাপ ও ক্ষয়ক্ষতির ছবিসহ আবকাইকে চালকবিহীন যানের হামলার ভিডিও প্রদর্শন করেন। তবে ঠিক কোথা থেকে হামলাটি এসেছে সে জায়গাটি চিহ্নিত করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন এটি বের করা মাত্রই প্রকাশ করা হবে।
ইরান কি বলছে?
ইরানের দিক থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি। বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে ইরানের একটি কূটনৈতিক নোট দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, “ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে তা দ্রুতই ইরানের জবাবে পাবে”। রয়টার্স ইরানের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলেছে সংবাদ সম্মেলন দেখাচ্ছে যে সৌদি আরব ওই হামলার বিষয়ে ‘কিছুই জানেনা’।
ওদিকে ইয়েমেন হুতি বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র বলছে স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ছবিগুলো বানানো এবং সৌদি আরব প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি চেপে গেছে। সামরিক মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইয়াহইয়া সারিয়া জোর দিয়ে বলেছেন যে হুতিরাই হামলা চালিয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে যাচ্ছে?
যদিও যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার করে বলেছে যে তাদের বিশ্বাস ইরানই হামলার পেছনে কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক জবাবে খুব একটা উৎসাহী নন। বুধবার তিনি বলেছেন সামরিক সংঘাতে জড়ানো সহজ কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অন্য ঘটনার অভিজ্ঞতা হলো পরে এটি জটিল হয়ে উঠে। তবে সৌদি আরবের ব্রিফিং এর আগে মি. ট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আরও তথ্য পাওয়া যাবে। ওদিকে মাইক পম্পেও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের সাথে দেখা করে আলোচনা করেছেন। আর হামলার বিষয়ে তদন্ত করতে আসা জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা সৌদি আরব ছেড়ে গেছেন।