সোহেল পারভেজ,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: “শেখ হাসিনার অবদান, সবার জন্য বাসস্থান” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষদের গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ ও সরকারী খাস জমিতে পুনর্বাসনসহ অবৈধ দখলদ্বারদের উচ্ছেদে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) সোহাগ চন্দ্র সাহা।
আর এ সকল কাজকে সফল করতে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করছেন জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বৃহৎ নেকমরদ বাজারের সাড়ে পাঁচ একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় গরুর হাট লাগতো একটি সরকারি অফিসের ভিতরে। তিনি ওই জমি উদ্ধার করে সরকারি খাস জমিতে গরুর হাট লাগার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও বেদখলে থাকা সাতটি পুকুর পাড়ের ২০ একর জমি উদ্ধার করে পুকুরপাড় গুলিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রেখেছেন ওই এসিল্যান্ড। এতে করে উপজেলার বহু
আশ্রয়হীন ও ভূমিহীন মানুষ নতুন করে ঠিকানা পেয়েছেন।
যোগদানের দশ মাসে তিনি রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রায় ৩৪ একর খাস জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন যার অনুমানিক মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ঐসব খাস জমি দীর্ঘদিন প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সরকার দখল হারাতে বসেছিল। উদ্ধারকৃত খাস জমিতে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১ হাজার ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য কাজ করছেন এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা।
ইতোমধ্যে তিনি উপজেলায় ৫ শতাধিক ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ঐসব ছিন্নমূল ও ভূমিহীনদের মধ্যে বৃদ্ধা, মহিলা, ভিক্ষুক, অসহায় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের পুনর্বাসনের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
উপজেলার ঘনশ্যামপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য ৬ বছরের সাথী ছোট বেলায় তার বাবাকে হারায়। বাবা দেখতে কেমন ছিল তাও জানেনা সে। গত ৩০ জুলাই পিতৃহীন, ছিন্নমূল, ভূমিহীন সাথীর পরিবার এক খন্ড খাসজমির দখল বুঝে পাই এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে। ওই জমিতে বসবাসের জন্য দুইটি কুড়ে ঘর নির্মাণ করে মা মেয়ে বসবাস করছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়,
ঘনশ্যামপুর গ্রামে খাস পুকুরে প্রস্তাবিত গুচ্ছগ্রামে ৩০ টি দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন পরিবার খাস জমির দখল বুঝে নেন। তাদের জন্য ইতোমধ্যে একটি পৃথক গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের প্রস্তাব পক্রিয়াধীন রয়েছে।
একই ভাবে পার্শবর্তী লেহেম্বা ইউনিয়নের বাস নাহার খাস পুকুরপাড়ে মুক্তিযোদ্ধা, ভিক্ষুক ও বৃদ্ধাসহ আরও ২৫ জন ভূমিহীনকে খাস জমির দখল বুঝিয়ে দেন এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা । পাশবর্তী মহেষপুর গ্রামে প্রস্তাবিত গুচ্ছগ্রামের খাস পুকুরে ২৩ জন ভূমিহীনকে খাস জমির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয় এসিল্যান্ড অফিসের মাধ্যমে।
এভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা রাণীশংকৈল উপজেলায় ৫শ জনের অধিক ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। গত দুই বছরে প্রায় ২শ ৪০ জন ভূমিহীনকে কবুলিয়াত দলিল সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। তারা গুচ্ছ গ্রামে ঘর বুঝে পেয়েছে। বিনামূলে টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছেন তারা। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তারা এখন অনেকটা সাবলম্বী।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যেগে রাউতনগর গুচ্ছগ্রাম, বাসনাহার গুচ্ছগ্রাম, মানিকা দিঘী গ্রচ্ছগ্রাম, মলানীদিঘী গুচ্ছগ্রাম ও রন্ধনদিঘী গুচ্ছগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে। ওইসব গুচ্ছগ্রামে ২শ ১১ জন ভূমিহীনকে পূনর্বাসন করা হয়েছে।
উপজেলার রন্ধনদিঘী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, সরকারি জমিসহ ঘর পাইছি। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন এসিল্যাল্ড স্যার। ছেলে মেয়েরা ভাল ভাবে পড়ালেখা করছে।
এছাড়াও তিনি হাট-বাজারে ইজারাদারদের অনিয়ম-দূর্ণীতি বন্ধ করতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন রাণীশংকৈলবাসির কাছে। তাঁর এ অল্প সময়ের দায়িত্বকালে বড় অংকের রাজস্ব পেয়েছেন সরকার। কেননা সম্প্রতি সরকারি ৭৫ হাজারের পুকুর ২৫ লক্ষ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এসব করতে গিয়ে এলাকায় স্বার্থে আঘাত লাগা ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করছে। যারা ফায়দা নিতে পারছে না তারা আজ তার বিরুদ্ধে কূৎসা রটানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষণা অনুযায়ি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। খাস জমিতে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১ হাজার ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫শ পরিবারের পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে ঘনশ্যামপুর গ্রামে ২টি খাসপুকুর, মহেষপুর গ্রামে ১টি খাসপুকুর, করনাইট গ্রামে ২টি ও গরকতগাঁও গ্রামে ১টি মোট ৭টি পুকুরপাড়ের ২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। ঐসাতটি পুকুরপাড়ে ৩শ ৬০ জন ভূমিহীনকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়াও গুচ্ছগ্রামের প্রস্তাব প্রেরণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে কূৎসা রটনাকারিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো কাজ করতে গেলে শত্রু তৈরী হবে-এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি ন্যায়-নীতির বিষয়ে অটল আছি। কাজেই এসব নোংরামি করে কেউ কিছু করতে পারবে না।
ভূমিহীনদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে স্বাগতম জানিয়েছে স্থানীয় সুধী সমাজ।