প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ৪৭ প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে

0
485
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ৪৭ প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে

খবর৭১ঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে ভারতীয় ঋণের ৪৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অফিস স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা আছে। ৩-৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উল্লিখিত দুটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় তিনটি লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বিষয়ে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

এছাড়া আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অফিস স্থাপনের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডি’র সচিব মনোয়ার আহমদ যুগান্তরকে বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকটি উইং চিফ পর্যায়ে হতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলওসির প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্যালোচন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আরও জানা গেছে, ভারতীয় প্রথম এলওসি’র আওতায় ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১০ সালে প্রথম এলওসির আওতায় ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি হলেও পরবর্তীকালে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে ঘোষণা করে ভারত।

এর আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে এ ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এসব প্রকল্পের অনুকূলে ১ আগস্ট পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের কাজই শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ সংশোধন করে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশোধন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন রেলপথ পুনর্বাসনের কাজও এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীকালে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

দ্বিতীয় এলসি’র আওতায় ১৬টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ২০০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০টি প্রকল্প প্রকিউরমেন্ট পর্যায়ে অর্থাৎ দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি দুটি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ চলছে। ২০ আগস্ট পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের এলওসির আওতায় ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এছাড়া ২০১৭ সালে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৪টি প্রকল্প প্রকিউরমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেও বাস্তবায়নে যাবে। বাকি ১২টি প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন ও প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে রয়েছে। এই এলওসি’র আওতায় ২১ মে পর্যন্ত ছাড় হয়েছে শূন্য দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তৃতীয় এলওসির আওতায় নেয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, বুড়িগঙ্গা রিভার রেস্টরেশন প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম বন্দরে মাল্টিপারপাস কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপন, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ, ঈশ্বরদীতে রেল ও সড়কপথের জন্য আইসিডি নির্মাণ, মংলা ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তরল বর্জ্য শোধনাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোতে যাতে গতি পায় সেজন্য আমরা শুরু থেকেই সতর্ক রয়েছি। অনুমোদন পর্যায়ে যাতে কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব এলে আমরা বিধিবদ্ধ স্টেপ মেনে যত দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা যায় তা করে দিচ্ছি।

সংশ্লিষ্টদের বলেছি, ছোটখাটো ভুল-ক্রটি হলে এখানে বসেই যেন সমাধান করা হয়। তবে এ কথা ঠিক দ্রুত করতে গিয়ে আমরা কোয়ালিটি মেরে ফেলতে পারি না। কোয়ালিটি এবং দ্রুত সময়- এ দুটি বিষয়ে সমন্বয় করেই কাজ করছি।

সূত্র জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে এলওসির আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা ও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিকল্প মত বা প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে ১৯ সেপ্টেম্বরের পর্যালোচনা সভায়।

অন্যদিকে ইতিমধ্যেই ঢাকার গুলশানে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশকে ঋণদানকারী সংস্থা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু এখনও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক (এমওই) স্বাক্ষর হবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩-৪ অক্টোবর ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেবেন। এরপর তিনি ৫ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ বৈঠকের পরই হয়তো সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here